ঢাকা অফিস: জামালপুরের ৭১ টিভি ও বাংলানিউজের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড বকশিগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউপি’র কুখ্যাত খুনি চেয়ারম্যান মাহমুদুুল আলম বাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সোমবার ১৯ জুন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে মন্ত্রীপরিষদের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদানকালে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম মীরপুরী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ খায়রুল আলম, শাহজালাল উজ্জ্বল, আমেনা ইসলাম,তমা রানী কর, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আলমগীর হোসেন, মিজানুর রহমান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপি প্রদান শেষে দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর বলেন, সাংবাদিক নাদিম হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড ইউপি চেয়ারম্যান বাবুকে মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণের জন্য আমরা স্মারকলিপি প্রদান করেছি। সংগঠনের ডাকে সারাদেশে আন্দোলন, সংগ্রাম চলছে। দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া না পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি, সারাদেশের সাংবাদিকরা পাশে আছেন। চেয়ারম্যান বাবুকে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে, চুড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সম্পাদক বরাবরে আবেদন দেয়া লাগলে তাও দেয়া হবে। একজন কুখ্যাত খুনি চেয়ারম্যানের পবিত্র আসনে থাকতে পারে না। সরকার জনস্বার্থে চেয়ারম্যান বাবুকে অপসারণ করবেন। আমরা আশা করি শীঘ্রই সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ঘাতক বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা,ধর্ষণসহ নানা দূর্ণীতি,অনিয়ম,ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি, জমির দখলদারি, নারী কেলেঙ্কারি,জনবিচ্ছিন্নতাসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগের খবর পত্রিকা-টেলিভিশনে প্রকাশের কারণে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে অকুতোভয় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে। চেয়ারম্যান বাবুর ওইসব অপকর্মের সংবাদ নাদিম তার মিডিয়া ৭১ টিভি ও বাংলা নিউজে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করেন। এতে চেয়ারম্যান বাবু নাদিমের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ফলে চেয়ারম্যান বাবু গত মে ২০২৩ তারিখে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে যা প্রাথমিক তদন্তে মিথ্যা প্রমান হওয়ায় গত ১৪ জুন ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। এতে চেয়ারম্যান বাবু আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ঐদিন (১৪ জুন) সন্ধ্যায় গোপন বৈঠক করে একটি কিলার গ্রুপ তৈরী করে নাদিমকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ১ নং আসামী বাবুর নির্দেশে বাবুর পুত্র অপরাপর আসামীদের নিয়ে ওৎঁ পেতে থাকে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাংবাদিক নাদিম পেশাগত দায়িত্ব শেষে বাড়ি ফেরার পথে ধাওয়া করে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে নামিয়ে ধরাধরি করে আটকে, পিটিয়ে আহত করে (যা সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণিত)। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বকশীগঞ্জ হাসপাতাল শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে গেলে পরদিন ১৫ জুন বিকাল পৌনে তিনটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম ১৭ জুন বকশীগঞ্জ থানায় বাবুকে প্রধান আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন । এ মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুুল আলম বাবু ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছে। তিন সন্তানের পরিবার বৃদ্ধ-বাবা মা, স্ত্রী এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। পরিবারটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তার বিষয়ে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে চান। মামলার গ্রেফতার এড়াতে বাবু চেয়ারম্যান পালিয়ে ভারত যাবার প্রাক্কালে ১৭ জুন সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের চিলহাটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহীনি। প্রধান আসামী মাহমুদুুল আলম বাবু সহ ১৩ আসামীর রিমান্ড চলছে জামালপুরে। নাদিম হত্যাকান্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ বিচার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল সারাদেশের সাংবাদিকরা। আমরা সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই।