১১ জুলাই থেকে ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন

0

ঢাকা অফিস : ভারতীয় রুপিতে লেনদেন শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুই দেশ। মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ফলে রুপিতে লেনদেনে প্রস্তুত বাংলাদেশ ও ভারত। আগামী ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এতে তৃতীয় কোনো মুদ্রার সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সরাসরি রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির মূল্য বিনিময় করতে পারবে এই দুই দেশ। এতে দুই দেশের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের ওপর চাপ কমবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, আগামী ১১ জুলাই ভারতীয় হাইকমিশনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ১১ জুলাই ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, কার্যক্রমটি ঢাকায় উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের পাশাপাশি এসবিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সি এস শেট্টিও জুম প্লাটফর্মে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান এবং বিকেএমইএর  ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
দুই দেশের সরকারের পর দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকি কাজ চূড়ান্ত করতে ভারত থেকে সম্প্রতি একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছিল। তারা বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সবকিছু ঠিকঠাক করে গেছে। এখন এই কার্যক্রম চালুর অপেক্ষায় আছে। এই লেনদেন কার্যক্রম শুরু হলে দুই দেশের মধ্যে সম্মত ট্রেডিং মেকানিজম অনুসারে, বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা ১১ জুলাই থেকে রুপিতে রপ্তানি আয় পেতে সক্ষম হবে এবং এর সমমূল্যের অর্থ আমদানি বিল নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা হবে। তবে মার্কিন ডলারে বাণিজ্য হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত থাকছে আগের মতোই। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই কার্যক্রম চালুর পর ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন। এই লেনদেনের জন্য ইতোমধ্যে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নিজ দেশের দুটি ব্যাংককে হিসাব খোলার অনুমতি দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সোনালী ও ইস্টার্ন ব্যাংক রুপি লেনদেনে বিশেষ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অনুমোদন পেয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে লেনদেন হিসাব খুলেছে সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। একইভাবে বাংলাদেশের এ দুটি ব্যাংকে হিসাব খুলেছে ভারতীয় দুই ব্যাংক।
কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করার আলোচনা চলছে প্রায় এক দশক ধরে। অর্থনীতিবিদরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তারা বলছেন, রুপিতে লেনদেন শুরুর মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যে একটি বৈচিত্র্য আসবে। তবে ভারত একটি বড় অর্থনীতির দেশ। এত বড় অর্থনীতির দেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ২০০ কোটি ডলার রপ্তানির সমপরিমাণ ভারতীয় রুপি দিয়ে বাণিজ্য শুরু হতে কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে নীতি নির্ধারকদের নজর রাখতে হবে বাংলাদেশ যেন রুপির বিনিময় মূল্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিশেষ করে, ডলারের সঙ্গে রুপির বিনিময় হার কত হবে, সেটা কি বাজারভিত্তিক হবে না নির্ধারণ করে দেওয়া হবে এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরাও এই উদ্যোগটিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, একক মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটি তারই অংশ। এর আগে বাংলাদেশ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে বাণিজ্য করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে শুরুতে রুপিতে লেনদেন চালু হলেও পরবর্তীতে টাকায় লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন। কোভিড ও পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ডলার সংকট দেখা দেয়। বাংলাদেশে ডলারের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ফলে পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। কিন্তু বাড়তি দামেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ডলার জোগান দিতে গিয়ে চাপ পড়ছে রিজার্ভের ওপর। আবার ব্যাংকগুলোতে চাহিদামতো ডলার না পাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে আমদানি প্রক্রিয়া। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক দেশই বর্তমানে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রায় দ্বিপক্ষীয় লেনদেন ব্যবস্থা চালু করছে। এ অবস্থায় ভারতের দিল্লিতে গত বছরের ডিসেম্বরে যখন দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়, তখনই ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশী মুদ্রা টাকা ও ভারতীয় মুদ্রা রুপি ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর ভারতের বেঙ্গালুরুতে গত ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরদের সম্মেলনের এক ফাঁকে দুই দেশের গভর্নরদের একটি বৈঠক হয়। উভয় গভর্নরই কাজটি দ্রুত করার বিষয়ে একমত হন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া গত বছর তাদের রপ্তানিকারকদেরকে বাংলাদেশের সঙ্গে ডলার এবং অন্যান্য প্রধান মুদ্রায় লেনদেন এড়িয়ে যেতে বলেছিল। বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাওয়া রোধ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুপির ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে, বিশেষ করে রপ্তানিতে গতি আনতে এ উদ্যোগ। ভারতের রপ্তানি বাণিজ্যসহ সার্বিক আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। 

Share.