ঢাকা অফিস: সাংগঠনিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ঢাকামুখী এই আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপ দিতে সরকারবিরোধী ইসলামপন্থি-ডান ও বামসহ সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন চাইবে দলটি। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না- এমন ঘোষণা দেওয়া দলগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিএনপির সমালোচক কোনো দলও যদি সরকারের পদত্যাগ চায়, তাহলে তাদেরও সমর্থন চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, ‘আমরা আন্দোলন করছি বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়, আমরা আন্দোলন করছি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে। এ জন্য যারা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে- এমন সব রাজনৈতিক ও জনগণের সমর্থন চাই আমরা।’ গত বছরের ডিসেম্বরে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও সমমনা ৫৩টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে শুরুর দিকের কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকতে দেখা গেলেও পরবর্তীতে তারা আর অংশ নেয়নি। যুগপৎ আন্দোলনে জোটগুলোতেও ফাটল দেখা যায়। বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিপি জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর এক সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার আগে ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করে বিএনপি। তবে এই সিদ্ধান্তকে ভুল বলে মনে করছেন দলের কোনো কোনো নেতা। তাদের মতে, জোটবদ্ধ থাকার কারণে শরিকদের পথচলা নিয়ন্ত্রণে ছিল। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে নানা খেলা হবে। সেখানে চাপ এবং লোভ সামলে কে কোন দিক থাকবে- তা নিয়ে এরই মধ্যে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই চিন্তা থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে একের পর এক কর্মসূচি নিচ্ছেন। এদিকে গত তিন দিন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট ও গণফোরাম-পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি কথার তোলা হলে বিএনপি তা নাকচ করে দিয়েছে। শক্ত কর্মসূচিতে যেতে চায় তারা। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করতে চায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। তবে এক দফার এই ঘোষণা এক মঞ্চ থেকে আসবে, নাকি যুগপৎভাবে ঘোষণা করা হবে তা নিয়ে দ্বিধা আছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, এক মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর গুরুত্ব বাড়বে; সেক্ষেত্রে সরকারবিরোধী যেসব দল রাজপথে কর্মসূচি করছে, তাদের আলাদা করে দেওয়া হবে। এই নেতা মনে করেন, চলমান আন্দোলনকে জাতীয় রূপ দিতে চাইলে এক মঞ্চে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রাজপথ থেকে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে এক মঞ্চে উঠলে আন্দোলনে ভালো ফল আসবে। জানা গেছে, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে তিনটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ছয়টি বড় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হচ্ছে। এ ছাড়া অপর পাঁচটি সংগঠনের উদ্যোগে ছয় জেলায় ‘মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাই করছেন নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির ১১টি অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মধ্যে আন্দোলন-সংগ্রামে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। অতীতে এই তিন সংগঠন রাজপথে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। আগামীতেও এই শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম দিয়ে বিএনপির এ ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯ জুন বগুড়া এবং ২৪ জুন বরিশালে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। আগামী ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা এবং ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হবে। নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এরই মধ্যে যেসব সমাবেশ হয়েছে তাতে দেশের তরুণ-যুবকদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে। বাকি সমাবেশগুলোতেও তরুণ জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ সম্পৃক্ত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাবে বলে আশা তাদের। সরকার পতনের আন্দোলনে তরুণদের মাঠে নামিয়ে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে চান তারা।
এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত
0
Share.