ডেস্ক রিপোর্ট: দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী ছাত্র জমায়েতে গুলি চালানোর আগে ১৭ বছর বয়সের যুবকটি স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। তবে সে স্কুলে না গিয়ে ৮০ কিলোমিটার দূরে জামিয়ার বিক্ষোভকারীদের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ওই গুলি ছোড়ার দৃশ্য ধারণ করেন সংবাদকর্মীরা। পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও স্কুলের কর্মকর্তারা ওই বন্দুকবাজকে ‘শান্ত ও নিরীহ’ বলেই বর্ণনা করেছেন। তার এই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডে অবাক হলেও তার পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন তারা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে আরও অনেকেই ভারতীয় আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পর দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে জামিয়ার শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই রামভক্ত গোপাল নামের এক কথিত কিশোর ‘এই নাও আজাদি’ বলে চিৎকার করে তাদের গুলি চালায়। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট এবং সহপাঠি বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ওই বন্দুকবাজ ‘হিন্দুদের গৌরব’ ফিরিয়ে আনার কথা বলত। শিবাম নামে তার এক সহপাঠি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “সে হিন্দুদের জন্য কিছু একটা করতে চাইতো। এটা তার মনে প্রাণে ছিল। অনেক দিন ধরেই সে বলতো, ‘বড় একটা কিছু করে দেখাবো’”। গুলি চালানোর বন্দুকটি কীভাবে তার কাছে এসেছে তা জানা না গেলেও তিন দিন আগে এক সহপাঠির কাছে কয়েক হাজার রুপি চেয়েছিল সে। সম্প্রতি বিজেপি নেতারা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন। সিএএ বিরোধীদের ‘দেশদ্রোহী’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি এক নির্বাচনি সমাবেশে এক বিজেপি বিক্ষোভকারীদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ উল্লেখ করে ‘শালাদের গুলি করে মারো’ বলে ভাষণ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ওই যুবকের গুলি করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে সমর্থন জানিয়ে উত্তর প্রদেশের জেওর শহরে তার বাড়ির পাশে মিছিল হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, ‘সে যা করেছে তা অসাংবিধানিক। তবে আমরা তার পাশে আছি’। ভারতের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার রাজ্যটির অন্য শহরের মতো জেওরে হিন্দু, মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুরা পাশাপাশি বসবাস করে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গুলি চালানো যুবকটি বেশিরভাগ সময় হয় স্কুল, নয়তো বাড়িতে কাটাতো। তবে গত কয়েক দিনে মোবাইল নিয়ে অনেক সময় কাটিয়েছে সে। তার বাবা বলেন, ‘আমরা তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাকে মুখ খোলাতে পারতাম না।’ ফেসবুকের দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে ‘হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান জানাতো ওই যুবক। এসব অ্যাকাউন্টের কয়েকটি পোস্টে তাকে অস্ত্র হাতে নিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে। সম্প্রতি ওই অ্যাকাউন্ট দুটি বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালের মার্চে ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুদের বজরং দলের বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানায় সে। কয়েকদিন পরে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলটির বৈঠকে নিজের অংশ নেওয়ার ছবি প্রকাশ করে। তবে ওই যুবককে দলীয় কর্মী বলে স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বজরং দলের স্থানীয় নেতা প্রবাণ ভাটি। গত তিন বছর ধরে ওই কিশোরের হিন্দু জাতীয়তাবাদে তার সমর্থনের কথা জানতো কয়েক সহপাঠি। বর্তমানে দিল্লি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে ওই কিশোর।
জামিয়ার গুলিবর্ষণকারীর প্রতিই সমর্থন তার প্রতিবেশীদের
0
Share.