শনিবার, নভেম্বর ২৩

মিশ্র বাগানে বাবুল আকতারের সাফল্য

0

ঢাকা অফিস: নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার উত্তররামপুর এলাকার আঃ সামাদের ছেলে বাবুল আকতার (৩৮)। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬জন। এসএসসি পাশের পর সংসারের হাল ধরার জন্য বিদেশে প্রায় ৮বছর কাটানোর পর দেশে ফিরে আসেন তিনি। কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় ফিরে এসে পরিবারের সকলের সহযোগীতায় ধান-সবজি চাষ বাদ দিয়ে আরম্ভ করেন কুল সহ থাই পেয়ারা, মাল্টা বারী, জং চায়না কমলা ও আমের মিশ্র বাগান। ৩৮বছরের এই চাষি মিশ্র বাগান করে ঘুচিয়েছেন বেকারত্ব। তার এই সাফল্যে অত্রাঞ্চলের অনেকেই এখন মিশ্র ফলদ বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসও এসব আগ্রহী চাষীদের যথাসাধ্য পরামর্শ সহ সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। সম্প্রতি উপজেলার উত্তররামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, একটি বাগানে সারি সারি কুলগাছ। আকারে ছোট। বড়জোর চার থেকে পাঁচ ফুট। কুলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ গুলো। বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। বাগান থেকে কুল তুলছিলেন চাষি বাবুল আকতার। তার সঙ্গে কাজ করছিলেন আরও কয়েকজন শ্রমিক। সবাই তাদের কাজে ব্যস্ত। বাবুল আকতার জানান, সুস্বাদু ফল হিসেবে অনেকেই পছন্দ করেন কুল। আর অল্পশ্রমে বেশি আয়ের জন্য কুল চাষ একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র। আমি এ চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। কুলের চারা সংগ্রহ করেছেন তিনি চুয়াডাঙ্গার জীবন নগর সহ বিভিন্ন যায়গা থেকে। তিনি জানান, তার এই বাগান থেকে চলতি বছরে প্রায় ৪/৫ লক্ষ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন। বাগান করার মতো নিজস্ব জমি না থাকায় বাবুল আকতার অত্র এলাকার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বড় (৪৯শতক) মাপের জমি প্রতি বছর বিঘা প্রতি ২৫হাজার টাকা করে নিয়ে ১০বিঘা জমিতে উন্নতজাতের কাষ্মিরী আপেল কুল লাগিয়েছেন, পাশাপাশি বারো মাসী আম সহ তার আছে মিশ্র আমের বাগান। এবাদেও আরো ১০বিঘা জমিতে তিনি কার্ডিসন-বারি-৪, থাই পেয়ারা, মাল্টা বারী, জং চায়না কমলার মিশ্র চাষ করেছেন। কুলে তিনি বিঘা প্রতি ১শ থেকে ১২০মণ হারে ফলন পাওয়া যাবে এবং তা প্রায় ৪/৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে বলেও তিনি আশাবাদী। বর্তমানে কুলের বাজারদর ও ভালো ফলনের কারণে অত্রাঞ্চলে দিন দিন এর আবাদ বাড়ছে। তিনি আরো জানান, ২০১৭সালে বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরে পরিবারের সকলের সহযোগীতায় মিশ্র বাগান তৈরীর পরিকল্পনা করেন এবং অত্র এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে বড় (৪৯শতক) মাপের জমি প্রতি বছর বিঘা প্রতি ১৫হাজার টাকা চুক্তিতে ২০বিঘা জমি ১২বছরের জন্য লীজ নেন। তার এই ২০বিঘা এলাকা জুড়ে আম বাগানে রয়েছে ২হাজার ৪শ আম গাছ। যেখানে রয়েছে  বারি-৪ সহ
উন্নত বিভিন্ন জাতের আম গাছ। সে জানায় ২০১৭সালে লিজ নিয়ে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির আম গাছ রোপন করে এবং সেটা ২০১৯সালে ৫বছরের জন্য ৫০লক্ষ টাকায় আমের পাইকারদের কাছে বিক্রি দিয়েছে। এপর্যন্ত তার এই মিশ্র বাগানে গাছ লাগানো সহ পরিচর্যা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১৪/১৫ লক্ষ টাকা। সে ২০১৯ সালে আরো ১০বিঘা জমি লীজ নিয়ে সেখানে পুকুর কেটে মাছ চাষ সহ কলা বাগান তৈরীর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এনিয়ে তার প্রায় ৫০বিঘা জমি লীজ নেয়া হয়েছে। এই মিশ্র বাগান ও পুকুর থেকে তিনি প্রতি বছর প্রায় ২৫/৩০লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশাবাদী। তিনি বলেন বেকারত্ব দূর করতে বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন না দেখে দেশেই বিভিন্ন ফলের মিশ্র বাগান করে সেখান থেকে সাবলম্বি হওয়া সম্ভব। এতে করে নিজ এলাকার অন্যান্য বেকারদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আকবর হোসেন জানান, এ অঞ্চলের মাটি এক ফসলী হওয়ায় শুধু আমন ধান পাওয়ার পর কৃষকদের এই জমি গুলি ফাঁকা পরে থাকতো। কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় অত্রাঞ্চলের কৃষকরা এসব এক ফসলী জমিতে আম, কুল সহ মিশ্র ফল বাগান তৈরী করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এতে করে তারা লাভবানও হচ্ছেন। উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষন অফিসার রেজাউল ইসলাম জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় সব ধরনের ফসল এ উপজেলায় হয়। এর মধ্যে মিশ্র ফল চাষে পত্নীতলা জেলার অন্যান্য উপজেলা গুলো থেকে অনেক এগিয়ে। এ উপজেলার চাষিরা এখন আম, কুল সহ মিশ্র ফল বাগানে আগ্রহী হচ্ছেন এবং বেশ লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার প্রকাশ চন্দ্র সরকার জানান, বাবুল আকতার অত্রাঞ্চলের একজন সফল মিশ্র ফল বাগান চাষী। তাকে দেখে অত্রাঞ্চলের অনেকেই এখন এই মিশ্র ফল বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতিবছর এ উপজেলায় মিশ্র ফলদ বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। কৃষকদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ ও আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা দিতে আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Share.