শনিবার, নভেম্বর ২৩

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহত: রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম

0

ডেস্ক রিপোর্ট: উত্তর-পশ্চিম ইরানে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এবং আরো কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে বলে রাষ্ট্রীয় টিভি ইরনা জানিয়েছে। সোমবার ইরানের গণমাধ্যমের খবরে এ কথা বলা হয়। তবে রাইসির নিহত হওয়ার বিষয়টি ইরান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। অন্যদিকে আল জাজিরাও জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির-আবদুল্লাহিয়ানসহ হেলিকপ্টারে থাকা অন্যরা মারা গেছেন বলে একাধিক ইরানি সংবাদ সংস্থা নিশ্চিত করেছে। দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ ও সংবাদ সংস্থা তাসনিমও প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ অন্যদের মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। এর আগে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ‘সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে’ বলে খবর পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় টিভি ইরনা বলছে, ‘প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টারে বেঁচে থাকার বা জীবিত থাকার কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ’ ইরানের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ‘দুর্ঘটনায় হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ’ ওই কর্মকর্তা আরো বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে… দুর্ভাগ্যবশত, সকল যাত্রী নিহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ’ আজ সকালে ইরানি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় দেশটির রেড ক্রিসেন্টের প্রেসিডেন্ট পীর-হোসেন কোলিভান্দ কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি। তবে, তিনি বলেছেন যে ‘পরিস্থিতি ভালো নয়’। এর আগে রেড ক্রিসেন্ট জানায়, তাদের উদ্ধারকারী দল হেলিকপ্টারটির সম্ভাব্য অবতরণ স্থানের দিকে যাচ্ছে। তুরস্কের একটি ড্রোন ঘটনাস্থল শনাক্ত করার পরে তারা সেখানে যাত্রা শুরু করে। এদিকে ড্রোনের মাধ্যমে তুলে আনা হয়েছে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের ছবি ও ভিডিও। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-এর সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলোতে ড্রোন ফুটেজ শেয়ার করা হয়েছে। সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের ভিডিও ফুটেজ এটি। রেড ক্রিসেন্টের করা ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ধ্বংসাবশেষে পাহাড়ের ভেঙে পড়েছে। হেলিকপ্টারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতিসহ আরো বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা ছিলেন। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং ওই এলাকা দুর্গম হওয়ায় উদ্ধারকারী দলের জন্য কাজ করা বেশ কঠিন হচ্ছে। এর আগে রোববার (১৯ মে) বিকেলে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয় প্রেসিডেন্ট রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি। আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধন করে ফিরছিলেন রাইসি। এদিকে, বিধ্বস্তের খবর প্রকাশের পরপরই কান্নার রোল পড়ে যায় ইরানজুড়ে। মসজিদ থেকে শুরু করে রাস্তা সবজায়গায় বিশেষ দোয়া করা হয়। রাইসির জন্য প্রার্থনা করতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। একই সঙ্গে জনগণকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে কোনও বিঘ্ন হবে না। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির উদ্ধারকাজে সহযোগিতার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে পাহাড়ে অভিযান চালাতে সক্ষম একটি দলকে ইরানে পাঠিয়েছে তুরস্ক। তদন্তকাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে, বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইরানের শত্রুভাবাপন্ন হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র। ৬৩ বছর বয়সী রাইসির দুর্ঘটনায় বড় কোনও ক্ষতি হলে ইরানের সংবিধান অনুযায়ী দেশের দায়িত্ব নেবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার অনুমোদন সাপেক্ষে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন তিনি। একই সঙ্গে ৫০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন করতে হবে। যেটির মাধ্যমে দেশে আবার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হবে।

Share.