যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে, তাদের লক্ষ্য লুটপাট করা: ড. কামাল

0

ঢাকা অফিস: বিদেশে টাকা পাচারকারীরা রাষ্ট্রীয় ডাকাত মন্তব্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব টাকা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় সামনের দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাবে। আমরা পিছিয়ে যাব। বৃহস্পতিবার দুপুরে একুশে মহান ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস উপলক্ষে গণফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ড. কামাল। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘একুশ মানে অধিকার আদায়ের অঙ্গীকার’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন হয়। এতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। লোটপাট, ফ্যাসিবাদ, নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পেতে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হচ্ছে। এ পাচার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ডাকাতি এবং পাচারকারীরা রাষ্ট্রীয় ডাকাত। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব টাকা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। সেখানে কামাল হোসেন বলেন, যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে, তাদের লক্ষ্য লুটপাট করা। টাকা পাচার করা। তাই তারা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার সাহস করে না। তারা রাষ্ট্রের মালিক নয়। জনগণ এ রাষ্ট্রের মালিক। তাই মালিকের মতো আচরণ করতে হবে। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, টাকা-পয়সা দিয়ে, ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশকে বারবার বিভক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। দেশের মানুষকে বিভক্ত করা যায়নি। নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও মৌলিক বিষয়ে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে নিজেদের প্রাপ্য অর্জন করা যায়। তাই ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে। তরুণ সমাজকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আলোচনায় সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়ীদ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ১৭ জন নিয়ে বঙ্গ জয় করতে পারলে আপনারা কেন পারবেন না? আপনাদের অধিকার আন্দোলনে সোচ্চার হতে হবে। হিংসা, বিদ্বেষ, রেষারেষি গণফোরামে থাকবে না। তিনি বলেন, দশের অনেক বুদ্ধিজীবীও ভাষা আন্দোলনকে শুধুমাত্র ভাষা আন্দোলনের লড়াই হিসেবে বিবেচনা করেন। বাস্তবিক অর্থে এটা অনেক বড়। তৎকালীন বিরাজমান অবস্থার প্রেক্ষিতে অন্তর্নিহিত শক্তি অর্জন করেছিল ভাষার আন্দোলন, যা স্বাধীনতার সংগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে গেছে। ভাষা সবসময় অসাম্প্রদায়িক। কারণ সবার মুখের ভাষা অসাম্প্রদায়িক। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ভাষাও অসাম্প্রদায়িক। সার্বিক মুক্তি, অধিকারের নাম একুশ। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, এবারের একুশের অঙ্গীকার হোক দূর হও দুঃশাসন, দূর হও স্বৈরাচার। গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন প্রমুখ। কামাল হোসেন বলেন, জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। জনগণকে সাথে নিয়ে সেই ঐক্যের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে, করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বৈরশাসকরা জনগণের ঐক্যের সামনে দাঁড়াতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা, জনগণের ঐক্য, মৌলিক অধিকারকে বাস্তবে রূপ দেয়া। জনগণ যেন তাদের অধিকার-প্রাপ্যটা আদায় করতে পারে, সেজন্য আমাদের ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে। পায়ায়-মহল্লায় থানায় জেলায় এবং সারা দেশে ঐক্যবদ্ধতার ওপর জোর দেন তিনি। ড. কামাল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে এই রাষ্ট্রকে কিন্তু আমরা ধওে রেখেছি। এটা কিন্তু কম অর্জন নয়। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিকে কাজে লাগিয়ে। সে রাষ্ট্রগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও অনেকবার হয়েছে কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি, জনগণ সফল হয়েছে। এখনও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে আমরা জিইয়ে রেখেছি। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, জনগণ হচ্ছে শক্তি ক্ষমতার উৎস। মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, কায়দা করে, সত্যিকার অর্থে মানুষের রায়কে তাদের পক্ষে নেয়া যায় না, গত ৪৮ বছরেও সেটা কেউ পারেনি, এটাই আমাদের ৪৮ বছরের বড় অর্জন। জোর করে ক্ষমতা দখল করা যায়, কিন্তু জনগণকে দখল করা যায় না।

Share.