চলতি বছরে জাতীয় নির্বাচন চান ৫৮ শতাংশ

0

ঢাকা অফিস:দেশের ৫৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোটার চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে। সেই সঙ্গে এখন নির্বাচন হলে বিএনপি ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জামায়াতে ইসলামী ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পাবে। ইনোভিশন কনসালটিং বাংলাদেশ নামের একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক সংকটকে উদ্বেগের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।শনিবার (৮ মার্চ) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এটি উপস্থাপন করেন ইনোভিশন কনসালটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ স্পিকসের প্রধান রুবাইয়াৎ সারওয়ার।এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইনোভিশন কনসালটিং বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী শাহেদ এইচ ফেরদৌস, ইনোভিশনের প্র্যাকটিস এরিয়া লিড আবদুর রব, বিডিজবসের সিইও ফাহিম মাশরুর, ব্রেইনের নির্বাহী পরিচালক ড. শফিকুর রহমান প্রমুখ।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনগণের নির্বাচনী দৃষ্টিভঙ্গি, কবে নির্বাচন চান, সরকারের কাছে প্রত্যাশা, কাকে ভোট দেবেন এবং ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয় গুরুত্ব দেন– এমন বিষয় জানতে চেয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত জরিপ চালানো হয়। এতে ৬৪ জেলার ১০ হাজার ৬৯০ জন ব্যক্তি অংশ নেন।৫৫ শতাংশ মনে করেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেজরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অর্থনৈতিক সংকটকে উদ্বেগের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তারা যে প্রত্যাশা রাখেন, তার মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ ৬৯ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী অগ্রাধিকার দিয়েছেন।এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন (৪৫ দশমিক ২ শতাংশ) এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি (২৯ দশমিক ১ শতাংশ) ছিল ভোটারদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। সরকারি সেবায় দুর্নীতি কমানোর প্রত্যাশা করেছেন ২১ দশমিক ৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। তাদের ভেতর ২ দশমিক ৬২ শতাংশ মনে করেন যে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ মনে করেন এটি আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। আর ৫৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মনে করেন এটি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।জনপ্রিয়তায় এগিয়ে বিএনপিজরিপে অংশ নেওয়া ৫৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোটার ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন চান। তাদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার জুনের মধ্যে এবং ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার পক্ষে। ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তারা কাকে ভোট দেবেন। এর মধ্যে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ তাদের পছন্দের দলের কথা জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দল হলো বিএনপি (৪১ দশমিক ৭ শতাংশ)। এর পরের অবস্থানে আছে যথাক্রমে জামায়াতে ইসলামী (৩১ দশমিক ৬ শতাংশ), আওয়ামী লীগ (১৪ শতাংশ), এনসিপি (৫ দশমিক ১ শতাংশ) এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল (৭ দশমিক ৬ শতাংশ)।এর মধ্যে বরিশাল (৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ), চট্টগ্রাম (৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ), ঢাকা (৪৪ দশমিক ৭১ শতাংশ), ময়মনসিংহ (৪৪ দশমিক ৬০ শতাংশ), রাজশাহী (৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ) এবং সিলেট বিভাগে (৫১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ) এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। খুলনা (৪৬ দশমিক ৩২ শতাংশ) এবং রংপুর বিভাগে (৪৪ দশমিক ৯১ শতাংশ) জামায়াত এগিয়ে।জরিপ অনুসারে, ভোটারদের মধ্যে একটি প্রজন্মগত পার্থক্য রয়েছে। জেনারেশন এক্স এবং বুমারদের মধ্যে বিএনপির প্রতি সমর্থন তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে জেনারেশন জেড-এর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত প্রায় সমান জনপ্রিয়।অনিশ্চিত ভোটার ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ।জরিপ অনুযায়ী, ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্ত নেননি যে তারা কাকে ভোট দেবেন। তাদের মধ্যে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ বলছেন যে, তারা প্রার্থী সম্পর্কে জানার পর সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চান। এ ক্ষেত্রে নারী ভোটারদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেশি (৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ)। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।ভোটে পরিবার ও সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবজরিপ অনুসারে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তে পরিবারের প্রভাব স্বীকার করেছেন ৪৭ শতাংশ মানুষ। বিপরীতে ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক থেকে পাওয়া সংবাদকে সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ ক্ষেত্রে টেলিভিশন (১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ) ও পত্রপত্রিকা (৪ দশমিক ২৫ শতাংশ) তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে টিকে আছে।সংস্কারে অগ্রাধিকার ৯ শতাংশজরিপে অংশ নেওয়া ৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন আছে। আর ৫ দশমিক ৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সংবিধান পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

Share.