বাংলাদেশ থেকে মাদারীপুর প্রতিনিধি:মাদারীপুরের খোয়াজপুরে মসজিদের ভেতরে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাজেল হাওলাদারের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ জনে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। (১৮ মার্চ) মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিহতের বড় ভাই রাজু হাওলাদার। নিহত তাজেল মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর-টেকেরহাট গ্রামের আজিজুল হাওলাদারের ছেলে।পুলিশ, পরিবার, এলাকাবাসী ও বিশেষ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় দুই ভাগে বিভক্ত ছিল জেলা আওয়ামী লীগ। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম। দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন বাহাউদ্দীন নাসিম সমর্থিত খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। আর তার প্রতিপক্ষ হোসেন সরদার (৬০) ছিলেন শাজাহান খান সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট ও খোয়াজপুর-টেকেরহাট বাজারের ইজারা দখল নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্বের জেরে ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খোয়াজপুর বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হোসেন সরদারের দুই পা ভেঙে দেন সাইফুল সরদার ও তার লোকজন। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পা ভাঙ্গার প্রতিশোধ ও পুরো সিন্ডিকেট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন হোসেন সরদার। এ নিয়ে মাসখানেক আগে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা ভাংচুরেরও ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শনিবার (৮ মার্চ) খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের ভিতরে হামলা চালিয়ে সাইফুল ও তার ভাই আতাউর সরদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হোসেন সরদারের লোকজন। একই সঙ্গে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় নিহত সাইফুলের আরেক ভাই অলিল সরদার, চাচাতো ভাই পলাশ সরদার(১৭), স্ত্রী সেতু আক্তার ও তাদের দলীয় তাজেল হাওলাদারসহ (১৮) আরো ৮ জনকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য অলিল, পলাশ ও তাজেলকে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (৮ মার্চ) পলাশ সরদারের মৃত্যু হয়। এর ৮ দিন পর চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল থেকে তাজেলকে গত ১৫ মার্চ বাড়িতে আনা হয়। দুইদিন পর আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। নিহত তাজেলের বড় ভাই রাজু হাওলাদার জানান, আট দিন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে গত (১৫ মার্চ) শনিবার বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। মঙ্গলবার দুপুরে খাবার খাওয়ার পর আবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ভর্তি করার আগেই মারা যায়। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) চাতক চাকমা জানান, আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত তাজেল মারা গেছে। উলেখ্য, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত (৮ মার্চ) রোববার রাতে ৪৯ জনের নাম উলেখসহ আরো ৮০/৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইফুল সরদারের মা সুফিয়া বেগম। এ মামলার প্রধান আসামিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তারা বর্তমানে মাদারীপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- মামলার ১ নং আসামি হোসেন সরদার, সুমন সরদার, মামলার ২ নং আসামি মতি সরদারের স্ত্রী কুলসুম বেগম, খোয়াজপুর গ্রামের রুবেল বেপারী ও সুজন মাহমুদ।
মসজিদের ভেতরে তিন ভাই হত্যা:চিকিৎসাধীন আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু
0
Share.