ঢাকা অফিস: নাটোরের গুরুদাসপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উপজেলাব্যাপী তিন ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননেন মৎসব চলছে। এলাকাবাসীর প্রতিবাদ,জনপ্রতিনিধিদের নিষেধাজ্ঞা ও প্রশাসনের অভিযান কোন কিছুই তোয়াক্তা করছেনা একশ্রেনীর অসাধু মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এমন চলতে থাকলে আগামীতে এ উপজেলা খাদ্যশষ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে। গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২১ মার্চ শনিবার সকালে সরজমিনে গেলে অভিযোগের সত্যতা মেলে। ওই ইউনিয়নের মশিন্দা বাজারের পুর্বপার্শ্বে দুটি,কাছিকাটা স্কুল এ্যান্ড কলেজের পাশে একটি,মাঝ পাড়ায় একটি,ঝিনিগাড়িতে একটি,বামনকোলায় ২টি,সাহাপুরে একটি,হাাঁসমারি হাজীর হাটে ২সহ অন্তত ১৫টি স্থানে তিন ফসলি কৃষি জমিতে চলছে পুকুর খনন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত ১০ জন এলাকাবাসী জানান,অবৈধ পুকুর খননের সাথে জড়িত রফিক,বাচ্চু,শামিম,লতিফ,সানোয়ার,সুরুজ,আলিমুদ্দিনসহ অনেকে। এরা এলাকার চিহ্নিত মাটি ব্যবসায়ী ডিন্ডিকেটের। তারা গ্রামের সাধারন কৃষকদের জমি চড়ামুল্যে অথবা দীর্ঘমেয়াদী লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে। পুকুরের মাটি ইটভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করে। কখনও কখনও ইটভাটা মালিকরাও নেপথ্যে থেকে পুকুর খননের সাথে জড়িত বলেও জানান এলাকাবাসী। তারা আরও জানান,ইটভাটাগুলোও গড়ে উঠেছে ফসলি জমিতে আবাসিক এলাকায়। অধিকাংশ ইটভাটার নেই পরিবেশ ছাড়পত্রসহ বৈধ কাগজপত্র। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে এস্কেবেটর (মাটি কাটার মেশিন)দিয়ে কাটা হচ্ছে অবৈধ পুকুর। প্রতিটি এস্কেবেট দিয়ে কাটা মাটি বহনে নিয়োজিত আছে অন্তত ৮/১০টি ট্রাক্টর ট্রলি,ড্রাম ট্রাক বা ট্রলি। এহিসাবে মশিন্দা ইউনিয়নেই ১৩০ থেকে ১৫০টি মাটি বহনের যান গ্রামীন মেঠোপথ ও মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওই পরিবহনগুলো ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত মাটিবহনের ফলে গ্রামীন কাঁচা,আধাপাকা ও পাকা-সড়ক মহাসড়ক,কালভার্ট ভেঙ্গে ছোট বড় গর্ত আর খনাখন্দে পরিনত হচ্ছে। পরিবহন ও চালকের নেই বৈধ কাগজ। চালকদের বেপরোয়া চালনার ফলে প্রায়শই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। প্রানহানীর মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ। অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে অনেকস্থানে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ মেয়াদী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। উপচেপরা মাটি রাস্তায় পড়ে রাস্তাগুলো ধুলিময় হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার আশংকা বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতি বার গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী তার পৌর সভার রাস্তাঘাট রক্ষায় রাস্তায় মালিকদের পুকুর খনন বন্ধ করতে বলেন। মাটির গাড়িগুলোকে পৌরসদরের রাস্তা পরিহার করে চলার নির্দেশ দেন। উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান,উপজেলা ব্যাপিই চলছে অবৈধ পুকুর খনন। অন্তত ৪০টি স্থানে যান্ত্রিক মেশিন দিয়ে চলছে পুকুর খনন। জনপ্রতিনিধিদের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না সিন্ডিকেটচক্র। এ মহামারি রোধ করতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন জানান,অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযান অব্যাহত আছে। আইন অমান্য করে তিন ফসলি জমিতে কাউকে পুকুর খনন করতে দেয়া হবেনা। এদিখে অবৈধ পুকুর খননের সাথে জড়িত সাথে একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, পুকুর খননের মহোৎসব ঠেকাতে মাটি ও ইটভাটা ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে নাটোরের কৃষিজমি ও কৃষকদের রক্ষা করতে ঢাকার ‘ল’ইয়ারস সোসাইটি ফর ল’ নামে একটি মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষে মহাসচিব অ্যাড. মেজবাহুল ইসলাম আতিক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন (রিট পিটিশন নং ৫৩২৭/২০১৯)। গত বছর ১২ মে রোববার ওই রিটের শুনানি শেষে নাটোর সদর, নলডাংগা, সিংড়া, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর এই পাঁচটি উপজেলায় কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে তদারকি এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন আদালত।