ঢাকা অফিস: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) দুপুরে জাপা প্রধানের প্রেস সচিব সুনীল শুভরায় স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিবের উদ্দেশে জিএম কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের স্মরণ থাকা উচিত যে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দলের এমপি ও মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তার পিতা মরহুম মীর্জা রুহুল আমিন।’
উল্লেখ্য, সোমবার (২৩ মার্চ) বিকালে এরশাদের ক্ষমতাদখল প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি দেন মির্জা ফখরুল। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, ‘১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। এই দিনে সামরিক ফরমান জারি করে শহীদ জিয়ার পুনরুজ্জীবিত বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বাক, ব্যক্তি, বিবেক, মুদ্রণ ও সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মানুষের সব নাগরিক স্বাধীনতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের এই দিনটিতে স্বৈরাচার এরশাদ অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে ইতিহাসের নির্লজ্জ স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে। এরশাদ কেবল ক্ষমতা দখল করে ক্ষান্ত থাকেনি বরং জনগণের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর দেশবাসীকে এক চরম দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে নিক্ষেপ করেছিল। অনৈতিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, সীমাহীন দুর্নীতিই স্বৈরাচারী শাসনের অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। ৯ বছর ছাত্র-গণআন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে গিয়ে স্বৈরশাসকের পেটোয়া বাহিনী গুলি চালিয়ে হত্যা করে অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে।
আজ মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) এই বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪ মার্চ উপলক্ষ্যে যে বক্তব্য রেখেছেন, আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ওই বক্তব্য প্রত্যাখান করছি। মির্জা আলমগীরের মনে রাখা উচিত ছিল যে, ওই সময়কার অবস্থা এবং প্রেক্ষাপটের কথা। কোনও দেশে সামরিক আইন প্রত্যাশিত নয় কিন্তু সামরিক আইন নিয়ে আসতে যারা বাধ্য করে প্রকৃতপক্ষে তারাই অপরাধী।’ তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বিএনপি চেয়ারম্যান এবং দেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার জাতির উদ্দেেশ ভাষণ দিয়ে নিজের দূর্নীতিবাজ মন্ত্রীসভা বাতিল ঘোষণা করে সেনা বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। তখন সেনাপ্রধান হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। ওই সময় যিনিই সেনাপ্রধান থাকতেন তাতেই রাষ্ট্রপতির দেওয়া দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হতো। তার জন্য যদি কারও অপরাধ হয়ে থাকে, সেই অপরাধী হবেন বিএনপির রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের ওই পরিবর্তনকে দেশের আপামর জনগণ এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাগত জানিয়েছিলো।’ বিএনপির মহাসচিবের উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে নির্যাতন-নিপীড়নের কথা বলতে বিএনপির লজ্জা হওয়া উচিত। দেশের মানুষ এখনও ভুলে যায়নি বিএনপির শাসনামলের দুর্নীতি-দুঃশাসন-অরাজকতা-খুন ও হত্যার মহোৎসবের কথা। জনগণ এখনো ভুলে যায়নি- বিএনপির শাসনামলে তৎকালীন বিরোধী নেতা শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২২ জন মানুষ হত্যা, পল্টনের জনসভায় বোমা হামলা, যশোরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা, গাইবান্ধা ও কানসাটের গণহত্যা, রাজনৈতিক নেতা ও ছাত্র হত্যার কথা। বিএনপিকে এখন তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে। দুর্নীতির দায়ে বিএনপি নেত্রীকে এখন সাজা ভোগ করতে হচ্ছে। এখন ২৪ মার্চের কথা বলে নিজেদের পাপ ঢাকার চেষ্টা করে কোনও লাভ হবে না। এদেশের মানুষ বিএনপিকে প্রত্যাখান করেই যাবে।’