অনলাইনে জনপ্রিয় হচ্ছে মৌসুমি ফল বিক্রি

0

ঢাকা অফিস: জ্যৈষ্ঠ মানেই মধু মাস। এসময় ফল খাওয়ার যেমন ধুম পরে যায় তেমনি নানা জাতের দেশীয় ফলে ভরপুর থাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। বিশেষ করে আম আর লিচুর অধিক্য সব থেকে বেশি। এসব ফল গ্রাম থেকে শহরের ফলপ্রেমী মানুষদের কাছে পৌছানোর মাধ্যম হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম; যা করোনা মহামারিকালে আরো বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।অনেকেই বাড়তি আয়ের জন্য অনলাইনে বিক্রি করছেন ফল। শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা যুক্ত হচ্ছেন মৌসুমি ফল ব্যবসায়। অনেকেই নিজেদের বাগান থেকেই এসব ফল অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে পৌছে দিচ্ছেন দেশের নানা প্রান্তে। অনলাইন ফল ব্যবসায় সব থেকে বেশি জনপ্রিয় ও চাহিদা সম্পন্ন ফল হচ্ছে আম ও লিচু।এসব ফল বিক্রির সঙ্গে যেসব তরুণ-তরুণীরা যুক্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের। কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে পূর্ণাঙ্গভাবে মৌসুমি ফল ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ করোনার এই বেকার সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন মৌসুমি ফল ব্যবসায়। এতে যেমন তাদের অলস সময় পার হচ্ছে, সঙ্গে হাতখরচ চালানোর মতো কিছু টাকাও রোজগার করতে পারছেন।গ্রীন ফুড নামে অনলাইনে একটি ফলের পেজ চালান তৌফিক রয়েল নামে এক তরুণ। পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। তাতে আশানরূপ সাফল্য না পাওয়ায় স্বাধীন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। এর মধ্যে ফলের মৌসুম আসায় তাজা ও নির্ভেজাল ফলের ব্যবসা করবেন বলে মনস্থির করেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। যথাসাধ্য পুঁজি নিয়ে নেমে পড়েন আমের ব্যবসায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি বাগানও লিজ নিয়ে নেন।রয়েল বলেন, ‘শুরুটা সহজ ছিল না। তবে ক্রেতা চাহিদার কথা চিন্তা করে আমি আমের বাগানটা চাঁপাইনবাবগঞ্জে নেই। কারণ এতে মানুষের আস্থা পাওয়া যাবে। তাছাড়া স্বাদের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। নানা ঝক্কি-ঝামেলার পর দুটি বাগান নেই আমরা। শুরু থেকেই সেসব বাগানের আম আমরা ক্রেতাদের চাহিদামতো পৌছে দিচ্ছি দেশের নানা প্রান্তে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, খুলনা ও সিলেটের মতো জায়গায় আমাদের গ্রীন ফুডের আম যাচ্ছে। দুই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাদে আমাদের ক্রেতারা খুব পজেটিভ রিভিউ দিয়েছে। যা আমার নতুন ব্যবসার জন্য অনুপ্রেরণা বলে মনে করি’বড় পরিসরের ব্যবসায় লাভ কেমন হবে বলে আশা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাভটা মৌসুম শেষে বলা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত যেভাবে বিক্রি হচ্ছে তাতে আন্দাজ করছি লাভ যদি বেশি নাও হয়, তবে লোকসান হবে না।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়ুয়া দিনাজপুরের ছেলে দীপক রায় এই করোনার সময়টায় বেকার বসে না থেকে অনলাইনে নিজের ফেসবুক টাইমলাইন ব্যবহার করেই মৌসুমি ফলের ব্যবসা করে যাচ্ছেন। বিক্রি করছেন আম ও লিচু।তিনি বলেন, এই করোনাকালীন সময়ে বসে না থেকে অনলাইনে আম ও লিচু বিক্রি করছি। আমার কোন পেইজও নেই। এক্ষেত্রে আমার ফেসবুক টাইম লাইনইটাই আমার জন্য অনলাইন শপের সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আমি আমার বাগানের আম ও লিচুর ছবি পোস্ট করায় পরিচিতজনেরা নক করে কিনতে চেয়েছেন। সেখান থেকেই এখন টুকটাক বিক্রি শুরু। এখন মোটামোটি বিক্রি ভালোই হচ্ছে। তবে আমার কাছ থেকে ক্রেতারা আমের থেকে লিচুটাই বেশি কিনতে আগ্রহী।এভাবে ব্যবসা করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো পচনশীল জিনিস। তাই সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে নষ্ট হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কুরিয়ারের গাফিলতি বা রাস্তায় ঝামেলা হওয়ার কারণে ফল পৌছাতে দেড়ি হলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তখন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। পরিচিত ক্রেতাদের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। কখনো কখনো ক্ষতিপূরণ আমার দিতে হয়। কুরিয়ার যদি ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে আমার ডাবল লোকসান হয়। এটাই সমস্যা।

গ্রাম বাজার নামে একটি অনলাইন শপের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হাসান রিয়াদ  বলেন, এই শপ থেকে নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করলেও এখন মৌসুমি লিচু আর আম বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখন আম ও লিচু বেশি চায় ক্রেতারা। আমের থেকেও লিচু বেশি বিক্রি হচ্ছে। সব খরচ বাদ দিলে খুবই সীমিত লাভ থাকে লিচুতে। এবার লিচুর ফলন কম হওয়ায় চাহিদা খুব বেশি। ক্রেতা চাহিদা যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও এই করোনাকালীন সময়ে বসে না থেকে কিছু একটা আয় করা যাচ্ছে, এটাই অনেক।রূপকথা ফুড ওয়ার্ল্ডের উদ্যোক্তা রায়হান আলী খান  বলেন, বাজারের সব আমই কিন্তু গাছপাকা নয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা কম টাকায় বেশি লাভের আশায় রাসায়নিক দিয়েও আম পাকায়। কেমিকেল দিয়ে পাকানো আম শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। স্বাস্থ্যের জন্য এসব ক্ষতিকর আম যাতে মানুষ না খায় সে লক্ষেই আমরা কাজ করছি। ঢাকায় বসে যাতে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আসল স্বাদের এবং ফরমালিনমুক্ত আম পায় সে ব্যবস্থা আমরা করছি। আমাদের নিজেদের বাগান থেকে সরাসরি আমরা কাস্টমারদের বাসা পর্যন্ত আম ডেলিভারী দিয়ে থাকি। এ বছর ভালো সারা পাচ্ছি। ঢাকাসহ সারাদেশে আমরা আম সরবরাহ করছি।

Share.