আমার স্মৃতিতে আমার বাবা “দেওয়ান গাজী আব্দুল ওয়াদুদ”

0

গাজী মোঃ জামিল: আমার বাবা দেওয়ান গাজী আব্দুল ওয়াদুদ। বাবার কথা মনে পড়তেই বাবার জীবনের হাজারো স্মৃতি মনে পড়ে। মনে পড়ে বাবার কর্মজীবনের কথা। বিশ্বখ্যাত রাষ্ট্র জাপান যখন এশিয়া উপমহাদেশে কোন ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী গড়ার অনুমতি পাচ্ছিল না তখন একমাত্র পূর্ববাংলায় তা গড়ার অনুমতি তারা পেয়ে যায়। আমার বাবা তখন সিলেট এম সি কলেজে অধ্যয়নরত। তখনকার সময়ে উক্ত ফ্যাক্টরি গড়ার কাজে ঊক্ত কলেজ থেকে ট্যালেন্ট ছাত্রদের আহবান করে তাঁদের সাথে ফ্যাক্টরি গড়ার কাজে অংশগ্রহণ তথা চাকুরী করার জন্যে। বাবা তখন বেশ উৎসাহ বোধ করেন সে কাজে অংশগ্রহণ করার জন্যে। এবং সেখানে কাজে জয়েন করেন।১৯.. কত ইং সালে তা আমি মনে করতে পারতেছিনা। তবে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের বছর কয়েক আগে তা ১০০% বলতে পারি। যাই হোক এসব বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে তা আরেকবার লিখব। বাবা খুব সৌখীন ছিলেন। বাবা সর্বক্ষণ স্মার্ট হয়ে চলা-ফেরা করতেন। বাবার সেই সময়কার পুরোনো ছবি আমার সংগ্রহে আছে। আমি এডিট করে আপনাদের পোস্ট দেব। বাবার শখ ছিল পাখি শিকার, বড়শি বাওয়া আর খেলাধুলা করা। সেগুলো বাবা কাজের ফাঁকে ফাঁকে করতেন। কারণ ফ্যাক্টরীতে বাবার শিফ্ট ডিউটি ছিল।
বাবা টেবিল টেনিসে সিলেট ডিস্ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। বাবার পুরস্কারে আমাদের আলমিরা, সকেছ ইত্যাদি ভরপুর ছিল। বাবার পুরস্কারের মধ্যে বেশীরভাগ ভাগই ছিল তখনকার সময়ের দামী দামী সব কাঁচের বাসনপত্র ইত্যাদি। মার কাছে শুনেছি ৭১ এ যুদ্ধে যখন বাবা আমাদের সবাইকে নিয়ে বাড়ি চলে যান, তখন যাবার আগে বাবা উনার সব পুরস্কার আমাদের বাসার হার্ডবোর্ড এর ছাদের উপরে তুলে রেখে যান। বাড়ি থেকে যখন বাবা বাসায় আসেন তখন বাবা উনার অনেক পুরস্কারের ক্ষয়-ক্ষতি দেখতে পান। কিন্তু তারপরও বাবার পুরস্কারে আমাদের বাসা সয়লাব ছিল। অনেক আত্নীয় – স্বজন আসলেও কোন সমস্যা হতনা। বাবার পুরস্কারগুলি আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনি জানিনা কেন…!!! তবে বাবার টেবিল টেনিস খেলায় সিলেটের ডিস্ট্রিক্টস্ চ্যাম্পিয়ন সিলটি এখনও অক্ষত আছে। বাবা চলে গেছেন কিন্তু বাবার অনেক স্মৃতি রয়ে গেছে আমাদের মাঝে। সেটা লিখে শেষ হবে না। বাবা উনার চাকুরী জীবনের ৩৫ টি বছর ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ( বর্তমানে শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি) এ কাটিয়েছেন। উনার সততা ও আদর্শ নিয়েই। বাবা আমাদের কাউকে কখনও বাবার কর্মস্হলে চাকুরী করিতে চাইতেন না। তার কারণ সেখানে এমোনিয়া গ্যাস বিভিন্নভাবে ব্যবহার হত যে সেটার বিষাক্ত গ্যাস সারাটি ফ্যাক্টরির বাতাসের সাথে মিশে থাকত। অনেকে ভালভাবে শ্বাস-প্রস্বাস নিতে পারতেন না। তবুও সংসার বা পরিবারের জন্যে কাজ করে যেতেন নীরবে। বাবা শেষ বয়সে এসে শ্বাস কষ্টে ভূগেছেন। যেটা থেকে বাবা আর পরিত্রান পাননি বাবার মৃত্যুঅবধি।  বাবা তুমি সূখে থেকো পরপারে তাই প্রার্থনা করি মহান প্রভুর কাছে।  বাবা তোমায় কেন মিছ করি? কেন বলতে পারো বাবা……? এই ছবিতে বাবা ঈদের দিনে শ্যারওয়ানী পরেছেন। বাবা তুমি ভাল থেকো এ শুধু আমার কামনা এবং প্রার্থনা মহান আল্লাহর দরবারে।

Share.