ইংল্যান্ডের উৎসবে বিষণ্ন ফিল্যান্ডার

0

স্পোর্টস ডেস্ক: সিরিজ শুরুর আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারনন ফিল্যান্ডার। জানিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষে ইতি টানবেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। বিদায়টা জয়ের উৎসবে সারতে চেয়েছিলেন প্রোটিয়া পেসার। অবশ্য আগের টেস্টেই সেই স্বপ্ন মাটি হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের জয়ে। তবু দলের সিরিজ বাঁচানোর সঙ্গে শেষটা অন্তত জয়ে রাঙাতে পারতেন ফিল্যান্ডার। সেটাও হলো না। চার দিনেই জোহানেসবার্গ টেস্টে হারের সঙ্গে সিরিজটাও খুঁইয়েছে প্রোটিয়ারা। ১৯১ রানের জয়ে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করেছে ইংলিশরা। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে বদল এসেছে। এসেছে নতুন ডিরেক্টর, যোগ হয়েছে নতুন কোচ, পাল্টায়নি শুধু হতাশার দৃশ্যগুলো। সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট জিতে ফাফ ডু প্লেসিরা যে বার্তা দিয়েছিল, সেটার ছাপ এতটুকু পাওয়া যায়নি পরের ম্যাচগুলোতে। ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা তিন টেস্ট জিতে ইংল্যান্ড লিখেছে প্রত্যাবর্তনের গল্প। বিপরীতে ১৯৫০’র দশকের পর প্রথমবার ঘরের মাঠে টানা দুই টেস্ট সিরিজ হারের লজ্জায় ডুবেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে ৪০০ করা ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৮ রানে অলআউট হলেও প্রোটিয়াদের দেয় ৪৬৬ রানের কঠিন লক্ষ্য। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৮৩ রানে অলআউট হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিততে হলে গড়তে হতো টেস্ট ইতিহাসের নতুন রেকর্ড। হয়নি তা। মাত্র ২৭৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও হেরেছে তারা। এ নিয়ে সবশেষ ৯ টেস্টের ৮টিতেই হারলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এই পরিসংখ্যান মনে করিয়ে দিচ্ছে ১০৮ বছর আগের লজ্জার রেকর্ড। ১৯১০ থেকে ১৯১২ সালে ১১ টেস্টের ১০টিতে হার এখন পর্যন্ত প্রোটিয়াদের সবচেয়ে বাজে রেকর্ড। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের আগে ‘দুর্বল’ শ্রীলঙ্কার কাছে দুই ম্যাচের সিরিজে হয়েছিল হোয়াইওয়াশ। চার ম্যাচের টেস্টে প্রোটিয়াদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে টপ অর্ডার। জোহানেসবার্গ টেস্টে ৪৬৬ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ দিন শুরু করা স্বাগতিকদের শুরুটা কিন্তু মন্দ ছিল না। উদ্বোধনী জুটি থেকে ৩৯ রান পাওয়ার পর টপ অর্ডার দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। দুই ওপেনার পিটার মালান (২২) ও ডিন এলগারের (২৪) বিদায়ের পর দারুণ ব্যাট করেছেন রাসি ফন ডার ডুসেন ও ডু প্লেসি। তাদের ব্যাটিংয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে জয়ের স্বপ্নও উঁকি দিয়েছিল একসময়। এবারের সিরিজে দলের মতো ডু প্লেসির নিজের অবস্থাও ছিল টালমাটাল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। ফন ডার ডুসেনের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৯২ রানের জুটি। কিন্তু বেন স্টোকসের নিচু হয়ে আসা বলটি তার ব্যাটে লেগে স্টাম্পে আঘাত করলে শেষ হয় ডু প্লেসির ৩৫ রানের ইনিংস। তবু আশা হয়ে ছিলেন ফন ডার ডুসেন। কিন্তু ‘অপ্রয়োজনীয়’ শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন তিনি। দলকে তো বটেই, নিজের জন্য ছিল হতাশার। কারণ সেঞ্চুরি থেকে তখন মাত্র ২ রান দূরে! ১৩৮ বলে তিনি ৯৮ রানে আউট হলে তখনই একরকম আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়াদের। তেম্বা বাভুমা ও এই সিরিজে স্বাগতিকদের একমাত্র ধারাবাহিক কুইন্টন ডি কক চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। বাভুমা করেন ২৭। এরপর ফিরে যান ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, আর ক্যারিয়ারে শেষবার ব্যাটিংয়ে নেমে ফিল্যান্ডার করেন ১০। একপ্রান্ত আগলে রাখা ডি কক ৩৯ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে ইংল্যান্ডের জয়টা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। যার আনুষ্ঠানিকতা সারেন পেসার মার্ক উড শেষ ব্যাটসম্যান আনরিখ নর্কিয়াকে আউট করে। জয় নিশ্চিত করা উড দ্বিতীয় ইনিংসেও ইংল্যান্ডের সেরা বোলার। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পওয়া এই পেসার ৫৪ রান খরচায় ৪ উইকেট তুলে নিয়ে পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। ৪৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া বেন স্টোকস হয়েছেন সিরিজসেরা। বিদায়বেলায় ফিল্যান্ডার বলে গেলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি। অসংখ্যা গ্রেটদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করাটা ছিল গর্বের ও সম্মানের। এখন সময় আরও কঠোর পরিশ্রম করার। তরুণ পেসার দিয়ে কাজ করতে চাই, যাদের কয়েকজন নিশ্চয় একদিন এই দলের (দক্ষিণ আফ্রিকা) হয়ে খেলবে।’ ক্যারিয়ারে অনেক সুন্দর মুহূর্ত উপহার দেওয়া ফিল্যান্ডারের হাত ধরে হয়তো একদিন অনেকেই খেলবেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলে। তবে শেষটা নিয়ে তার আক্ষেপ থাকবে সবসময়ই। এমন বিদায় তো তিনি চাননি!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৪০০ ও ২৪৮

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৮৩ ও ৭৭.১ ওভারে ২৭৪ (ফন ডার ডুসেন ৯৮, ডি কক ৩৯, ডু প্লেসি ৩৫, বাভুমা ২৭, এলগার ২৪, মালান ২২; উড ৪/৫৪, ব্রড ২/২৬, স্টোকস ২/৪৭)।

ফল: ইংল্যান্ড ১৯১ রানে জয়ী।

সিরিজ: চার ম্যাচের সিরিজ ইংল্যান্ড ৩-১ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: মার্ক উড।

সিরিজসেরা: বেন স্টোকস।

Share.