ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভে নিহত-৭৬

0

ডেস্ক রিপোর্ট:  ইরানে হিজাব ইস্যুতে পুলিশি হেফাজতে মাহশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভে অন্তত ৭৬ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নরওয়ে ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান মানবাধিকার (আইএইচআর) এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। যদিও দেশটির সরকারের সর্বশেষ তথ্য মতে, বিক্ষোভে অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। এর আগে ইরানের একটি মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছিল, প্রায় ১২ শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জন সাংবাদিক রয়েছেন। এত মানুষ নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনিকে হিজাব আইন ভঙ্গের অভিযোগে আটক করে দেশটির মোরালিটি পুলিশ। তারপর তাকে পুলিশের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। আটকের পর তিন দিন কোমায় থাকার পরে মৃত্যুবরণ করেন মাহশা আমিনি। পুলিশের দাবি, মাহশা আমিনি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, পুলিশের ভ্যানে তোলার সময় মাহশা আমিনিকে নির্যাতন করা হয়। একারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে দেশটির ৮০টি শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হচ্ছে। বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাদের গুলিতে প্রতিদিন হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কুর্দিস্তানে মাহশা আমিনির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার জানাজা শেষ হওয়ার পরে কিছু মানুষ চলে যায়, আর কিছু মানুষ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। তারপর তারা গভর্নর অফিসের সামনে জড়ো হয়। সেখানেও তারা সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। তখন নিরাপত্তা রক্ষীরা টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেখান থেকেই দেশজুড়ে হিজাবের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ইরানের সরকার বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক কার্যক্রম ধীরগতি করে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহারেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভের তীব্রতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিক্ষোভের মধ্যেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর হিজাব ছাড়া ফেসবুকে ভিডিও আপলোডের অভিযোগে দেশটির মানবাধিকারকর্মী মেলিকা কারাগোজলুকে পৌনে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লব হওয়ার পর থেকে নারীদের জন্য হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক। দেশটির মোরাল পুলিশ এই ড্রেস কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ড্রেস কোডের নিয়ম বাস্তবায়নে বিভিন্ন মানুষ বিশেষত তরুণীদের সঙ্গে মোরাল পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা অনেক সময় জোর করে নারীদেরকে পুলিশের গাড়িতে তোলে। ২০১৭ সালে কয়েক ডজন নারী জনসম্মুখে হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানান। তখন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

Share.