ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে নিজ দলেই রোষের মুখে বাইডেন

0

ডেস্ক রিপোর্ট: ইসরায়েলি সাময়িক বাহিনীর বিমান হামলায় ফিলিস্তিনি ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনি ৫৫ জন শিশুসহ ১৮১ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। এরপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েল নীতি নিয়ে পুরোনো ফরমূলার পুনরাবৃত্তি করেছেন। এতে জো বাইডেন নিজ দলেই রোষের মুখে পড়েছেন।ডেমোক্র্যাটরা মানবাধিকার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত হামলা বন্ধে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার দাবি জানাচ্ছেন।ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে বরংচো গত বুধবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিনকেন বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।ফিলিস্তিনি নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইসরায়েলের সামরিক বাহনী হামলা চালালেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে মনে করছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বামপন্থি উদারনৈতিক সদস্যরা। তারা ক্রমেই বাইডেনের তীব্র সমালোচনায় সরব হচ্ছেন।সামাজিক অন্যায়-অবিচার এবং বর্ণবাদ রুখে দাঁড়িয়ে জনগণকে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাইডেনের দল। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সরকারি বিবৃতিতে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে কথা বলার সেই পুরোনো ধরন ফিরে আসায় এবং মানবাধিকার উপেক্ষিত হওয়ায় দল এখন নিমজ্জিত হয়েছে কুৎসিত কোন্দলে।মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড খুনকে কেন্দ্র করে ফুঁসে ওঠা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেলে দিয়েছিল খাদের কিনারায়। সেই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে উদারনৈতিক ডেমোক্র্যাটরা এখন চান যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতেও ন্যায়বিচারের প্রতিফলন ঘটুক, যেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্ণবাদী নিপীড়নই দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।ফিলিস্তিনি নিরস্ত্র ১৮১ জনের বেশি মানুষ মারা গেলেও বাইডেন মনে করছেন, হামাসের রকেটের জবাবে ইসরায়েলকে এখন পর্যন্ত ‘বাড়াবাড়ি রকমের কিছু’ করতে দেখেননি। গত শনিবারেও ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের সহিংসতা নিয়ে দু’পক্ষের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।ওইদিনও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে টুইটে এক বক্তব্যে ফের ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের ওপর জোর দিয়েছেন বাইডেন। তার এই অবস্থানের জেরেই মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে এর বিরুদ্ধে সরব হন উদারনৈতিক ডেমোক্র্যাটরা।নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি অ্যালেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ বৃহস্পতিবার ক্ষুব্ধ এক ভাষণে প্রশ্ন তুলে বলেন, ফিলিস্তিনিদের কি বাঁচার অধিকার আছে? বাইডেন প্রশাসন যদি এক মিত্রকেই রুখে দাঁড়াতে না পারে তাহলে কার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে? তারা তাহলে কিভাবে মানবাধিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার দাবি করে?মিশিগানের ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি রাশিদা তালিব গত শনিবারেই গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভবনে হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ইসরায়েল গণমাধ্যমকে হামলার নিশানা করছে, যাতে বর্ণবাদের হোতা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধাপরাধ বিশ্ব দেখতে না পায়।মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট ক্রিস ভ্যান হোলেন বলেন, ইসরায়েলের পরিকল্পিত ফিলিস্তিন উচ্ছেদ অভিযানে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হচ্ছে। তাছাড়া, সর্বোপরি বাইডেন প্রশাসনের মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।উদারনৈতিক ডেমোক্র্যাটরা দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল নীতির বিরোধিতা করে আসছে। আর প্রগতিশীলরা দিন দিনই এই নীতি পরিবর্তনের দাবি তোলার মতো নতুন নানা কৌশল অবলম্বনের ডাক দিয়ে সরব হচ্ছে।সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরোদস্তুর ইসরায়েল ঘেঁষা পদক্ষেপ না নিলেও ডেমোক্র্যাটদের অনেকেই মনে করেন, কেবল ট্রাম্পের মতো না হওয়াটাই বাইডেনের জন্য যথেষ্ট নয়।গত শনিবার সিএনএন-কে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি এরিক সলওয়েল বলেন, আমাদেরকে এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে হবে। ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে এখন একজন দায়িত্বশীল প্রেসিডেন্ট আছেন, আমি মনে করি তিনি ইসরায়েলের নেতাকে যা করা প্রয়োজন সেটি করতে চাপ দিতে পারবেন।একই সুর শোনা গেছে বার্নি স্যান্ডারসের বক্তব্যেও। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে বার্নি বলেছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট আসায় যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বে ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিতে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।বাইডেন প্রশাসনের প্রতি নানাভাবে ক্ষোভ জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন, সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সসহ আরও অনেকে।

Share.