উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরব দেখিয়েছে টাইগাররা

0

স্পোর্টস রিপোর্ট: গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে স্পিনারদের দাপটে টানা দুই ম্যাচ জিতে আগেভাগেই সিরিজ জয়ের পর এবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচেও এখানে ঘূর্ণি দাপট দেখিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে সিরিজে উইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরব দেখিয়েছে টাইগাররা। এ নিয়ে বাংলাদেশ ৩১টি সিরিজ জিতল যার মধ্যে প্রতিপক্ষকে ১৬ বারই হোয়াইটওয়াশ করেছে। আগে ব্যাট করতে নেমে তাইজুল ইসলামের মায়াবী স্পিনে কুপোকাত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৮.৪ ওভারে মাত্র ১৭৮ রানে গুটিয়ে যায়। ২৮ মাস ৯ দিন পর আবার ওয়ানডে খেলতে নেমে ২৮ রানে ৫ উইকেট নেন তাইজুল। ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে উইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি দেখান তিনি। জবাব দিতে নেমে লিটন দাসের অর্ধশতকে জয়ের পথ সুগম করে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ব্যাটারদের জন্য কঠিন এ উইকেটে মাত্র ৯ বল হাতে রেখে জয় পায় টাইগাররা, তারা ৪৮.৩ ওভারে তোলে ৬ উইকেটে ১৭৯ রান। টেস্ট ও টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার কঠিন প্রতিশোধ তুলেই এবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফর শেষ করল টাইগাররা। টস জয়ের হ্যাটট্রিক করেন তামিম। যথারীতি ধীরগতির উইকেটে স্বাগতিক উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। একমাত্র পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও ৪ স্পিনারে একাদশ বাংলাদেশের। ২০২০ সালের ৬ মার্চ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা তাইজুল ফিরেছেন, বাদ পড়েন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। কাইল মেয়ার্সের বদলে কিয়াসি কার্টিকে নিয়ে নেমে উইন্ডিজরা তাইজুলের বিধ্বংসী বোলিংয়ে কোনঠাসা হয়ে যায়। তার জোড়া আঘাতে দলীয় ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ক্যারিবীয়রা। এরপর তাইজুলের বিপক্ষে লড়াইটা শুধু অধিনায়ক নিকোলাস পুরানের। অবশ্য চতুর্থ উইকেটে ১২৮ বলে ৬৭ রানের জুটি গড়ার পথে ভাল সঙ্গ দেন কার্টি। তিনিও ২৭তম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের শিকার হন। কার্টি ৬৬ বলে ২ চার, ১ ছয়ে ৩৩ রান করেন। এরপর রোভম্যান পাওয়েলের সঙ্গে আরও ৩৪ রানের জুটি গড়েন পুরান। ৯৩ বলে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকা পুরানকেও বোল্ড করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান তাইজুল। পুরান ১০৯ বলে ৪ চার, ২ ছয়ে ৭৩ রানে বিদায় নিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বেশিদূর এগোতে পারেনি। ৮ বল বাকি থাকতেই তারা গুটিয়ে গেছে ১৭৮ রানে। দীর্ঘদিন পর ফিরে প্রথম বলেই সফল হওয়া তাইজুল ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রানে ৫ উইকেট নেন। দেশের বাইরে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সেরা এবং স্পিনার হিসেবে সেরা বোলিং নৈপুণ্য এটি। পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে সেরা। মুস্তাফিজ ৯ ওভারে ২৪ ও নাসুম ৯.৪ ওভারে ৩৯ রানে ২টি করে উইকেট নেন। অফস্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন ১০ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেও অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ৮ ওভারে ৬১ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকেন। জবাব দিতে নেমে দলীয় ২০ রানে নাজমুল হোসেন শান্তর (১) উইকেট হারায় বাংলাদেশ সপ্তম ওভারে। ধীরগতির উইকেটে নিচু হয়ে আসা বলে রান করতে হিমশিম খেলেও এরপর লিটন দাসকে নিয়ে ৫০ রানের দারুণ জুটি গড়েন সাবলীল তামিম। বাঁহাতি স্পিনার গুদাকেশ মোতি ভাঙ্গেন জুটি। ৫২ বলে ৪ চারে ৩৪ রানে বিদায় নেন তামিম। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যোগ দিয়ে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন লিটনকে। কিন্তু জোড়া আঘাত হানেন মোতি। দুর্দান্ত খেলতে থাকা লিটন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি হাঁকিয়ে মোতির স্পিনে সাজঘরে ফেরেন। ৬৫ বলে ৫ চার, ১ ছয়ে ৫০ রান করেন তিনি। দুই বল পরেই আফিফ হোসেন ধ্রুবকে (০) বোল্ড করে দেন মোতি। এরপর মোসাদ্দেক ১৪ ও অতি সতর্ক মাহমুদুল্লাহ ৬১ বলে ২৬ রানে বিদায় নিলে ১১৬ রানে ৫ ও ১৪৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপেই পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু নুরুল হাসান সোহান দারুন ব্যাটিং করেন। তার দ্রুতগতির ৩৮ বলে ৪ চারে অপরাজিত ৩২ আর মিরাজের ধৈর্যশীল ৩৫ বলে ১৬ রানে সপ্তম উইকেটে ৩২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। মোতি ১০ ওভারে মাত্র ২৩ রানে নেন ৪ উইকেট।
এ নিয়ে ৭৯তম দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ৩১তম সিরিজ জেতা বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ দলকে ১৬তম বার হোয়াইটওয়াশ করল। যদিও হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ৩৫ বার! ৩ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ সবমিলিয়ে খেলেছে ৫৮টি। বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে ১১ বার, একই ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ২৬ বার। এটি দেশের বাইরে বাংলাদেশের ৩৫তম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতল অষ্টমবার। হেরেছে ২৪ বার। ৩টি হয়েছে ড্র। বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে মাত্র চতুর্থবার হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। আর বিদেশে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ১৯ বার। এটি বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১তম সিরিজ। বাংলাদেশ জিতেছে ৬ বার, উইন্ডিজ ৫ বার। বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করেছে ৩ বার, হয়েছে ৪ বার। এ নিয়ে ৪৪ ওয়ানডে খেলল দু’দল। জয়ে একসময় অনেক এগিয়ে থাকলেও উইন্ডিজকে টানা ১১ ম্যাচে হারিয়ে সমতা এনেছে বাংলাদেশ। এখন উভয় দলের সমান ২১টি করে জয়। ২০১৮ সালে করা আগের সফরে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ এই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ওয়ানডে হেরে যাওয়ায়। এবার সেখানে টানা ৩ জয় তুলে উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস- ১৭৮/১০; ৪৮.৪ ওভার (পুরান ৭৩, কার্টি ৩৩, রোমারিও ১৯, রোভম্যান ১৮; তাইজুল ৫/২৮, মুস্তাফিজ ২/২৪, নাসুম ২/৩৯)।
বাংলাদেশ ইনিংস: ১৭৯/৬; ৪৮.৩ ওভার (লিটন ৫০, তামিম ৩৪, সোহান ৩২*, মাহমুদুল্লাহ ২৬ মিরাজ ১৬*; মোতি ৪/২৩)।
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী, হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

Share.