উত্তর মহাসাগরে নতুন শিপিং রুট নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মুখে রাশিয়া

0

ডেস্ক রিপোর্ট:   উত্তর মহাসাগরে গলছে বরফ। এতে রাশিয়ার কয়েক শতকের পুরোনো স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার আরও কাছে চলে এসেছে। এই অঞ্চলে বরফ গলায় রাশিয়ার জন্য একটি নতুন শিপিং রুট সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা হতে পারে বিশ্ব বাণিজ্যে শিপিং রুটের নতুন কেন্দ্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উষ্ণতার মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এতে করে উত্তর মহাসাগরে জাহাজ চলাচলের রুট তৈরিতে বিতর্কিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাছাকাছি রয়েছে ক্রেমলিন, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে মস্কোর দ্বন্দ্ব তৈরি করবে। কারণ, আর্কটিক (উত্তর) মহাসাগরে এই দুটি দেশেরও পরিকল্পনা রয়েছে।উত্তর মহাসাগরে ব্যাপকভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর বরফের বিস্তৃতি অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় সর্বনিম্ন রেকর্ড করা হয় এবং ২০২১ সালে সর্বনিম্ন আরেকটি রেকর্ড হতে পারে। এটি মস্কোকে এই রুটে অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগর বা বর্তমানে মালামাল পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত মালাক্কা প্রণালির মধ্য দিয়ে নৌপরিবহণের তুলনায় ইউরোপ ও এশিয়ায় ভ্রমণের দূরত্বকে এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনতে পারে এই রুট।রাশিয়া আশা করছে, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে উত্তর মহাসাগরে যে সমুদ্রপথ তৈরি হবে, সে পথে জাহাজ চলাচল সহজ হবে। আর তারাই এই সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণ করবে। আর এখানে সাগরের নিচে মজুত যে বিপুল তেল ও গ্যাস সম্পদ রয়েছে, তা রপ্তানি করে তারা বিপুল বাণিজ্য করতে পারবে।তবে এখানে কিছু বিষয় রয়েছে, যেমন— বরফ ভেঙে রুট তৈরি, ট্রানজিট খরচ ও আর্কটিক সার্কেলে নৌচালনা নিয়ে অনিশ্চয়তা। কিন্তু, এখানে শিপিং রুট তৈরি হলে জ্বালানি সরবরাহ ও কার্গো পরিবহণে রাশিয়া বিশ্ব বাণিজ্যের শিপিং রুটের কেন্দ্রে পরিণত হবে। মস্কো বলেছে, এই রুট নিয়ন্ত্রণ করা ও ট্রানজিট মূল্য নির্ধারণের অধিকার রাশিয়ার রয়েছে। এই রুটটি চীনের সঙ্গে দরকষাকষির সুযোগ তৈরি করবে।রাশিয়ার বৃহত্তম কয়লা কোম্পানি সুউকের ‘শিপিং ফর ট্রান্সপোর্ট ডিভিশন’র প্রধান আলেক্সান্ডার অ্যালোশকিন বলেন, ‘ভবিষ্যতে কী রয়েছে, তা আমাদের দেখতে হবে। তবে এটি বেশ ভালোই হবে।’এদিকে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, জলপথে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের অধিকার রাশিয়ার নেই। আর পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই নৌরুটের ফলে বাস্তুসংস্থান (ইকোসিস্টেম) অবর্ণনীয় ক্ষতির মুখে পড়বে। উত্তর মহাসাগরে ইকোসিস্টেম ভেঙে যেতে পারে। রাশিয়া উত্তর মেরুতে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। তবে এখানে চীনও সুযোগ খুঁজছে এবং রাশিয়া তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। চীন এই রুটের দিকে তাকিয়ে আছে কারণ, দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।উত্তর মেরুকে ঘিরে এই প্রতিযোগিতায় উত্তেজনা বাড়ছে। উত্তর মেরু নিয়ে রাশিয়ার বিরাট উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে এবং এখানে তাদের যেসব স্বার্থ আছে, সেগুলো রক্ষায় তারা প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, তারা উত্তর মেরু অঞ্চলের ‘সামরিকায়ন’ ঘটাচ্ছে। অন্যদিকে, রাশিয়া বলছে মেরু অঞ্চলে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা স্পষ্টতই ‘উসকানিমূলক’ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন মাত্রার সামরিক তৎপরতা আর দেখা যায়নি।

Share.