চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, আটক- ২

0

ঢাকা অফিস: যশোর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় একজন প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। এ ঘটনায় একজন চিকিৎসকসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে শহরের জেল রোডে অবস্থিত বন্ধন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত প্রসূতি হলেন শহরের পালবাড়ির গাজিরঘাট এলাকার ইসমাইল হোসেন হিরুর স্ত্রী ময়না খাতুন (২৬)। নিহতের ভাই শিমুল পারভেজ বলেন, ‘সন্তানসম্ভবা বোনের ব্যথা উঠলে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় শহরের কুইন্স হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর সুরাইয়া নামে একজন নার্স আমার বোনকে পাশের বন্ধন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে ঢাকা থেকে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ এসেছেন বলেও তিনি জানান। এরপর বোনকে বন্ধনে নিয়ে যাই। সেখানকার ডাক্তার পরিতোষ কুমার কুন্ডু আমাদের জানান রোগীর অবস্থা ভালো না, এই মুহূর্তে সিজার করা দরকার। বোনের ডেলিভারি ডেট আরও তিন দিন বাকি ছিল। কিন্তু ডাক্তার নতুন করে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওটিতে নিয়ে যান। এমনকি তিনি বন্ড সইও করাননি। সিজার করেই ডাক্তার বেরিয়ে চলে যান। ২০-২৫ মিনিট পরেই বোনের খিঁচুনি ওঠে এবং তিনি মারা যান।’ শিমুল পারভেজ অভিযোগ করেন, ‘সিজার শেষে বোনের অবস্থা খুব খারাপ হলে নার্সরা ব্লাড সংগ্রহ করতে বলেন। এক ব্যাগ রক্ত আনা হয়। পরে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নার্সরা আরও কয়েকটি ইনজেকশন এবং রক্ত আনার কথা বলেন। কিন্তু সেই সময় আমার দুলাভাই বোনের হাত-বুক পরীক্ষা করে দেখেন, তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু হাসপাতালের নার্স ও কর্মীরা মৃত অবস্থায় বোনের শরীরে ইনজেকশন এমনকি তাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা ৩-৪ মিনিটের মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সও ম্যানেজ করে ফেলেন। এ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে আমরা কোতোয়ালি পুলিশকে বিষয়টি জানাই। পুলিশ এসে ডাক্তার পরিতোষ কুমার কুন্ডু ও হাসপাতালের ম্যানেজার আক্তারুজ্জামানকে থানায় নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘মামলা করতে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল থেকেই আমরা থানায় অবস্থান করছি। ইলেকট্রিসিটি না থাকায় অভিযোগ কম্পোজ করা যায়নি।’ জানতে চাইলে ডা. পরিতোষ কুমার কুন্ডু বলেন, ‘বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে সিজার করা হয়। তখন কোনও সমস্যা হয়নি। অতিরিক্ত ব্লিডিংও হয়নি। অপারেশনের পর সেলাই করে দিয়ে আমি চলে যাই। এরপর তাকে পরিষ্কার করে বেডে দেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর আমাকে ফোনে জানানো হয়, রোগীর অবস্থা খারাপ। আমি ইমার্জেন্সি কিছু ড্রাগ ব্যবহারের কথা বলে দিই। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ওখানেই থাকেন। পরে আমাদের যা করণীয় তা করেছি। তারপরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। আট বছর আগে উনি একটা বাচ্চা প্রসব করেন। মাঝে একটা বিরাট গ্যাপ। আর উনি মারা গেছেন শ্বাসকষ্টের কারণে। তার যে শ্বাস কষ্ট ছিল, সে কথা স্বজনরা আগে জানাননি।’ যশোর কোতোয়ালি থানার ইনসপেক্টর তাসমীম আলম বলেন, ‘রোগীর মৃত্যু নিয়ে উত্তেজনার খবর পেয়ে আমরা ওই হাসপাতালে যাই। এরপর সেখানকার ডাক্তার ও ব্যবস্থাপককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। নিহতের স্বজনরা অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।’

Share.