জামিয়ায় হামলার প্রতিবাদে ভারত জুড়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ছাত্রবিক্ষোভের আগুন

0

ডেস্ক রিপোর্ট: জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার পর বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। রবিবারের ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনার পর নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, বানারাস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি (আইআইটি), টাটা ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (টিআইএসএস), ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশের প্রথমসারির অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে ক্লাসরুম ছেড়ে পথে নেমে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে শিক্ষার্থীরা। কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকেই মনে করতে পারছেন না সবশেষ কবে দেশজুড়ে এমন ছাত্র-বিক্ষোভ হয়েছিল। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে সম্প্রতি আইন সংশোধন করেছে ভারত। ১২ ডিসেম্বর রাতে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পরেই আইনে পরিণত হয়েছে বিতর্কিত বিলটি। তারপর থেকেই সহিংসতা বেড়েছে সমগ্র ভারতে। রবিবার সন্ধ্যায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে জামিয়ার শিক্ষার্থীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। রবিবারের হামলার প্রতিবাদে রাতেই দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। সোমবার সেই ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রথম সারির প্রায় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।  সকাল থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্যাম্পাসের চেহারা পাল্টাতে থাকে। ক্লাসরুম নয়, জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদ জানাতে রাস্তাই ছিল শিক্ষার্থীদের একমাত্র গন্তব্য। জামিয়ায় হামলার পরপরই প্রতিবাদে নামে দিল্লির জওহরলাল নেহরু ও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।  পরে এই বিক্ষোভে সামিল হয় অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ঘটনার জেরে রবিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিলের দাবি তোলে। কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু শিক্ষার্থী পরীক্ষা বয়কট করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসে কলা অনুষদের বাইরে বিক্ষোভে দেখান তাঁরা। জমায়েত থেকে দিল্লি পুলিশ এবং কেন্দ্রবিরোধী স্লোগান ওঠে। সোমবার সন্ধ্যায় মশাল হাতে শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাস জুড়ে বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন ও গুলি চালানোর প্রতিবাদে এদিন রাস্তায় নেমেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা। লক্ষ্নৌতে ছাত্র-বিক্ষোভ আক্রমণাত্মক চেহারা নেয়। সকালে দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলেমা কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তবে বিশাল পুলিশ বাহিনী ওই বিক্ষোভ মিছিলকে ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে দেয়নি। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি ও পি সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশ কোনও ছাত্রকে বাইরে বার হতে দেয়নি। বিক্ষোভকারীরা ইট ছুড়লেও বড় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’ বিক্ষোভে শামিল হয় বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ)শিক্ষার্থীরাও। জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশি অভিযান সম্পর্কে বিএইচইউয়ের এক পিএইচ ডি-র ছাত্র বলেন, ‘‘গত কাল পুলিশ যা করেছে, তাকে অভিযান বললে কম বলা হয়— এটা চূড়ান্ত বর্বরতা।’’ টিআইএসএসের দু’শোর বেশি শিক্ষার্থী কলেজের বাইরে বিক্ষোভে সামিল হয় প্ল্যাকার্ড-পোস্টার হাতে। কেন্দ্র এবং দিল্লি পুলিশ বিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানায় তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, অবিলম্বে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিক পঞ্জি চালুর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশি অভিযান ও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ হয়েছে আইআইএসসি-বেঙ্গালুরুতেও।  কেন্দ্র-বিরোধী প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘আমরা ভারতীয় নই- এ কথা বলার সাহস হয় কীভাবে?’’ আইআইএম বেঙ্গালুরুর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা  জামিয়া মিলিয়ার ঘটনা নিয়ে মোদীকে চিঠি লিখেছেন। ক্লাসবর্জন করেছে কানপুর, বম্বে, মাদ্রাজ আইআইটির শিক্ষার্থীরা। পথে নেমেছে হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

Share.