তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা

0

ঢাকা অফিস: তৃণমূল নেতাদের কথা শুনতে গণভবনে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠনে কোথায় কি সমস্যা তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যই আগামী মাস থেকে এই বৈঠক শুরু হবে। এছাড়া সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন আর সারাদেশে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে সরব থাকবে আওয়ামী লীগ। এবার শুধু দলের সিনিয়র নেতাই নন, বড় বড় প্রতিটি কর্মসূচিতে মাঠে থাকবেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে যে ৩৩টি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রথমদিকে ধারাবাহিকভাবে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির। জানা গেছে, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের জাতীয় কমিটির বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে দলের বাজেট অনুমোদন করা হবে। ২১ ও ২২ ডিসেম্বর বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠকে বাকি সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার নির্বাচিত এমপিও আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ করছেন তিনি। এই জরিপ চলছে, চলবে। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরাই দলের মনোনয়ন পাবেন। টাকা দিয়ে দলের বিভিন্ন কমিটিতে আসার অভিযোগও রয়েছে। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে। টাকা নেই বলে ত্যাগী ও স্বচ্ছ ইমেজের নেতাদের কমিটিতে রাখা হবে না- এটা ঠিক নয়। বৈঠকে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই টাফ হবে, প্রতিযোগিতামূলক হবে। এখন মুখে ‘না’ বললেও বিএনপি নির্বাচনে আসবে। কারণ বিএনপি ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই নির্বাচনকে হাল্কা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী জাতীয় সম্মেলনকে সফল করতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিসহ ১১টি উপ-কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগে যারা কমিটিতে ছিলেন- তারাসহ দক্ষ ও অভিজ্ঞদের নিয়ে এসব কমিটি দ্রুততম করে ফেলার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেন তিনি। সম্মেলনকে সামনে রেখে দলীয় গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র যুগোপযোগী করতে সংশোধনের ওপরও জোর দেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বৈঠকের পর তার সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শুরু হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টার বৈঠকে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সাখাওয়াত হোসেন শফিক স্ব স্ব বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন। বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জেলায় জেলায় সফরে বের হওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন থেকে দলকে আরও সময় দেবেন তিনি। সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় রেখে জেলায় জেলায় জনসভা ও জনসমাবেশ করবেন তিনি। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেট থেকে এই জেলা সফর শুরু করবেন। এরপর তিনি ঝালকাঠি, রাজশাহী ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলা সফর করবেন। চট্টগ্রামে ৪ ডিসেম্বর দলীয় জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন। ওইদিন সকালে সেখানে সেনাবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বিকেলে জনসভা করবেন। এছাড়া জেলা নেতাদের পর্যায়ক্রমে ঢাকায় ডেকে মতবিনিময়ও করবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সব জেলা সম্মেলন দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব জেলায় সম্মেলন হয়েছে অথচ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি- জেলা নেতাদের মাধ্যমে সেগুলো দ্রুত জমা নিয়ে অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। যেসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকবে, সেসব জেলায় আগে সফর ও জনসভা করবেন তিনি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ও নারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নিয়ে সমাবেশ করারও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে দুজন সদস্য প্রশ্ন তুললে সরকারপ্রধান জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে বিবেচনা করা হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আগামী চার ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশের জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সম্মেলনের আয়োজন করতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, যেসব সংগঠন সম্মেলন করতে পারবে না, তাদের কমিটি ভেঙ্গে দিতে হবে। মাঠের রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিকে দলের সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে ধারাবাহিক বড় বড় কর্মসূচি আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভার এই বৈঠকে। সূত্র জানায়, দলের সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটিসহ বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের কমিটি বহাল রাখা হয়েছে। তবে যারা মারা গেছেন, তাদের জায়গায় নতুনদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সম্মেলনের তারিখসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবহিত করবেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে, বিরোধী দলের আন্দোলনে সরকার কোন বাধা দেবে না। তবে অগ্নিসন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে এখন থেকে দলীয় কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া পর্যায়ক্রমে বিভাগগুলোতেও জনসভা ও সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।

Share.