দ্রুতই তিস্তার পানি বন্টন ইস্যুর সমাধান হবে বলেও শেখ হাসিনা আশা

0

ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশ দিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় সমাধান করেছে। দ্রুতই তিস্তার পানি বন্টন ইস্যুর সমাধান হবে বলেও শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন। আজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভারতের রাজধানী দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। ‘৭৫ সালে বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে হারিয়ে আমরা দুই বোন যখন অসহায়, এই ইন্ডিয়াতেই আমরা তখন আশ্রয় পেয়েছিলাম। শুধু আমি না, আমাদের পরিবারের আরও যারা আপনজন হারিয়ে, গুলি খেয়ে আহত হয়, তারা এখানে এসে আশ্রয় নেয়।সবসময় আমাদের দুঃখের সময় ইন্ডিয়া আমাদের পাশে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। কানেকটিভিটি, বিনিয়োগ, বর্ধিত বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি ও ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরা সমাধান করেছি। আমি মনে করি, দুই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, দারিদ্র্য বিমোচন করা, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা; শুধু আমাদের দুই দেশ না, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সব এলাকা মিলেই যেন এই এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নত হয়। তিনি বলেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে সমস্যা থাকতে পারে।সেগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। এর দৃষ্টান্ত আমরা দেখিয়েছি। আজ যেসব সমঝোতা চুক্তি আমরা সই করেছি তা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উন্নত করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, এখানে আসা সত্যি খুব আনন্দের বিষয়। তিন বছর পর আবার আসতে পেরেছি। ছয় বছর রিফিউজি হিসেবে ছিলাম, এক্সাইলে ছিলাম। সেই স্মৃতিও মনে পড়ে।তখনও সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি।কাজেই ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক আমরা সেটাই চাই। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। তিনি বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমি ফলপ্রসূ আলোচনার আরেকটি দফা শেষ করেছি। এই আলোচনার ফলাফল উভয় দেশের জনগণের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে। আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বৈঠক করেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মোদীজির দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করি। এটি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গতি প্রদান করে চলেছে। ভারত হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিকটতম প্রতিবেশী। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসাবে পরিচিত।’ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পানি ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক এই নদীর পানির ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালালেও নানা কারণেই এই পানি ভাগাভাগি চুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের উদযাপনের সফল সমাপ্তির জন্য আমি ভারত সরকার এবং আমার ভারতীয় বন্ধুদের অভিনন্দন জানাতে চাই। শেখ হাসিনার ভাষায়, ‘আমি শুভকামনা জানাই কারণ ভারত আত্মনির্ভর ভারত-এর জন্য প্রণীত সিদ্ধান্তগুলো অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে।’ শেখ হাসিনার আগে সেখানে বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, গত বছর আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছি। আমরাও প্রথম ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপন করেছি। আগামী দিনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিয়েও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিল্লি পৌঁছান। আগামী বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

Share.