ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের পথে শ্রীলঙ্কা

0

স্পোর্টস রিপোর্ট: অর্থনৈতিক সঙ্কটের কশাঘাতে বিপর্যস্ত দেশটি এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কায় এখনও জ্বলছে দারিদ্র্যের আগুন। তবে সাধারণ মানুষের মনে জ্বলজ্বল আগুনেও মুখে হাসির সুবাসিত ফুল ফুটিয়ে চলেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। মঙ্গলবার রাতেও দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শক্তিশালী ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছে লঙ্কানরা। ভারতের ৮ উইকেটে করা ১৭৩ রান তারা ১৯.৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে টপকে যায়। এশিয়া কাপ টি২০ আসরের সুপার ফোরে টানা ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট তাদের। এরপরও তাদের এই আনন্দ মাটি করে দিতে পারে যদি পাকিস্তানের কাছে তারা হেরে যায় এবং আফগানিস্তান বাকি দুই ম্যাচে ভারত-পাকিস্তানকে হারায়। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সমান ৪ পয়েন্ট হবে এবং রানরেটে এগিয়ে থাকা দুই দল তখন ফাইনাল খেলবে। লঙ্কানদের তখনই শুধু ফাইনালে না ওঠার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকবে। আর ভারত টানা দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে প্রায় ছিটকেই পড়েছে। তবে সেটি নিশ্চিত হবে আজ যদি আফগানিস্তানকে হারিয়ে দেয় পাকিস্তান। আফগানরা জিতলেই শুধু সুযোগ থাকবে ভারতের এবং পাকিস্তানকে বাকি ম্যাচ হারতে হবে। দুবাইয়ে টস জিতেই ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় লঙ্কানরা। শুরু থেকেই দুর্দান্ত বোলিং করেন শ্রীলঙ্কার বোলাররা। আর এতে দলীয় ১৩ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন লোকেশ রাহুল (৬) ও বিরাট কোহলি (০)। বাঁহাতি পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা বোল্ড করে দেন কোহলিকে। চাপে পড়া ভারত পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৪ রান তোলে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা দুর্দান্ত খেলতে থাকেন। তার সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে সূর্য কুমার যাদব মাত্র ৫৮ বল থেকে ৯৭ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন। এতে বিশাল সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় ভারত। তবে ৬ ম্যাচ পর অর্ধশতকের দেখা পাওয়া রোহিত ৪১ বলে ৫ চার, ৪ ছয়ে ৭২ রানে সাজঘরে ফিরলে রানের গতি কমে আসে তাদের। চামিকা করুনারত্নে তাকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দেন। এছাড়া লঙ্কান বোলাররাও দুর্দান্ত লাইন-লেংন্থে বোলিং করে চেপে ধরেন ভারতীয় ব্যাটারদের। সূর্য কুমারও ২৯ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ৩৪ রানে দাসুন শানাকার শিকার হন। এরপর আর কেউ দাঁড়াতে পারেননি। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৪৬ রান তুলতেই ভারত আরও ৪ উইকেট হারায়। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৭৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। দুর্দান্ত বোলিং করা মাদুশঙ্কা ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রানে ৩টি এবং শানাকা ২ ওভারে ২৬ রানে ও চামিকা ৪ ওভারে ২৭ রানে ২টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ভুবনেশ^র কুমারের প্রথম ওভারে ১ রান নিয়ে সতর্ক শুরু করেন দুই লঙ্কান ওপেনার কুসল মেন্ডিস ও পাথুম নিশঙ্কা। কিন্তু এরপরই তারা ধীরে ধীরে ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হতে থাকেন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে তাই বিনা উইকেটে ৫৭ রান তুলে উড়ন্ত সূচনা পায় তারা। এই ভয়ঙ্কর জুটি ভাঙ্গে ১২তম ওভারের প্রথম বলে। ৩৭ বলে ৪ চার, ২ ছয়ে ৫২ রানে যুজবেন্দ্র চাহালের লেগস্পিনে সাজঘরে ফেরেন নিশঙ্কা। একই ওভারের চতুর্থ বলে চারিথ আসালঙ্কাকে (০) শিকার করেন চাহাল। ৩ ওভার পরেই আরেক হাফসেঞ্চুরিয়ান কুসলকে এলবিডব্লিউ করে ভারতকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন তিনি। কুসল ৩৭ বলে ৪ চার, ৩ ছয়ে ৫৭ রান করেন। ১৪তম ওভারে দানুষ্কা গুণাথিলকাও (১) রবিচন্দ্রন অশি^নের অফস্পিনে সাজঘরে ফিরে যান। তাই ১১০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে লঙ্কানরা। কিন্তু শানাকা ও ভানুকা রাজাপাকসে দারুণ ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করেন মাথা ঠা-া রেখে এবং দেখেশুনে চার-ছক্কাও হাঁকাতে থাকেন। শেষ ৫ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৫৪ রান। অথচ আর কোন উইকেট হারায়নি তারা। শেষ ২ ওভারে ২১ রান প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ১৯তম ওভারে ভুবনেশ^র কুমার ১৪ রান দেন। শেষ ওভারে ৭ রান দরকার, অর্শদীপ সিং দুর্দান্ত বোলিং করেন, কিন্তু পঞ্চম বলে ওভারথ্রো থেকে ২ রান নিয়ে রুদ্ধশ^াস এক জয় ছিনিয়ে নেয় লঙ্কানরা ১ বল হাতে রেখেই। ১৯.৫ ওভারে তারা ৪ উইকেটে ১৭৪ রান তোলে। শানাকা ১৮ বলে ৪ চার, ১ ছয়ে ৩৩ এবং রাজাপাকসে ১৭ বলে ২ ছক্কায় ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন। চাহাল ৩৪ রানে নেন ৩ উইকেট। দুর্দান্ত অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা হন লঙ্কান অধিনায়ক শানাকা। আজ আফগানদের পাকিস্তান হারালেই টানা ২ হার দেখা ভারতের বিদায় নিশ্চিত হবে। আফগানরা জিতলে ফাইনালের ক্ষীণ আশা টিকে থাকবে তাদেরও। সুপার ফোরে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়ে ৪ পয়েন্ট পেয়েও শ্রীলঙ্কা ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হতে পারে। যদি পাকিস্তান আরেকটি ম্যাচ জেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং আফগানিস্তান বাকি দুই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানকে হারায়। কারণ সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সমান ৪ পয়েন্ট করে হবে এবং রানরেটে এগিয়ে থাকা দুই দল তখন ফাইনাল খেলবে। শুধু তখনই শ্রীলঙ্কা ফাইনাল বঞ্চিত হতে পারে।

স্কোর: ভারত ইনিংস- ১৭৩/৮; ২০ ওভার (রোহিত ৭২, সূর্য কুমার ৩৪, হার্দিক ১৭, পান্ত ১৭; মাদুশঙ্কা ৩/২৪, চামিকা ২/২৭, শানাকা ২/২৬)। শ্রীলঙ্কা ইনিংস- ১৭৪/৪; ১৯.৫ ওভার (কুসল ৫৭, নিশঙ্কা ৫২, শানাকা ৩৩*, রাজাপাকসে ২৫*; চাহাল ৩/৩৪, অশি^ন ১/৩২)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা: দাসুন শানাকা (শ্রীলঙ্কা)।

Share.