নগদ-রকেট ও বিকাশ কর্মকর্তা পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার

0

ঢাকা অফিস: বিকাশ, নগদ, রকেট টাকা লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডধারীকে টার্গেট করে প্রতারণার মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ ও রকেটের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। ছয়টি ধাপে কাজ করে ক্রেডিট কার্ডধারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে চক্রটি। সোমবার বেলা ১১টার দিকে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রতারক চক্র বিকাশ, নগদ, রকেটের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে টাকা লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিআইডি অনুসন্ধান করে চক্রটিকে শনাক্ত করে। অনুসন্ধানে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরপর সিআইডির একটি চৌকস দল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জুনায়েদকে গ্রেপ্তার করে। সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার জুনায়েদের বরাত দিয়ে মুক্তাধর বলেন,`জুনায়েদের নেতৃত্বে তিন থেকে চার সদস্যের একটি চক্র মোবাইলে টাকা লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিল। এই চক্রের সদস্যরা নিজেদেরকে বিকাশ, নগদ, রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। মোট ছয়টি ধাপে তারা প্রতারণা করেন।

                       যেসব ধাপে প্রতারণা :

প্রথম ধাপ: প্রতারক বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করার জন্য বলে। আর অ্যাকাউন্টটি আপডেট না করলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানায়।

দ্বিতীয় ধাপ: প্রতারক ভুক্তভোগীকে বলেন, ব্যবহৃত বিকাশ অ্যাকাউন্টটিতে ভুল পাসওয়ার্ড তিন বারের বেশি দিলে ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘সাসপেন্ড’ হয়ে যায়।

তৃতীয় ধাপ: প্রতারক ভুক্তভোগীকে জানান, তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়ে গেছে। এই ব্লককৃত টাকা ভিসা কার্ড মাস্টার কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব।

চতুর্থ ধাপ: প্রতারক ভুক্তভোগীর ভিসা কার্ড অথবা মাস্টার কার্ডের নম্বর এবং সিভিএন জানতে চান।

পঞ্চম ধাপ: ভুক্তভোগী ওই তথ্য সরবরাহ করলে ভিসা কার্ড অথবা মাস্টার কার্ড নেওয়ার সময়ে ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল নম্বরে একটা ওটিপি কোড সম্বলিত একটি ম্যাসেজ যায়।

ষষ্ঠ ধাপ: ভুক্তভোগী ম্যাসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারক জানতে চান। কোডটি পাওয়ার পর ভুক্তভোগীর ভিসা কার্ড অথবা মাস্টার কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্রেডিট প্রতারক তার নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা সংগ্রহের পর পরই তারা তাদের ব্যবহৃত সকল আইডেন্টিটি গোপন করে রাখেন।

মুক্তাধর জানান, জুনায়েদ তার সহযোগীদের নিয়ে এ পর্যন্ত এক কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ রকম একটি প্রতারণার ঘটনায় ভুক্তভোগী গত জুলাই মাসে ডেমরা থানায় মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয় মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার খাত্রা গ্রামের মো. ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে।

Share.