নদী ভাঙন রোধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে সকল সরকারই ব্যর্থ : মানবন্ধনে নেতৃবৃন্দ

0

ঢাকা অফিস: বঙ্গীয় ব-দ্বীপে হাজার বছর ধরেই নদী ভাঙন এক অনিবার্য বাস্তবতা৷ বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ও শেষে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদ ভাঙনের মুখে পড়ে৷ ফলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পরে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। তিনি বলেন, বন্যা, নদী ভাঙন আমাদের নদী পরিবেষ্টিত এই দেশে মোটেও নতুন নয়। কিন্তু নদী ভাঙন রোধ, এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে এখনও আমাদের সরকার সেভাবে সক্ষমতা দেখাতে পারিনি। ফলে প্রতিবছরই আমাদের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। রবিবার (৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী ভাঙন রোধের পরিকল্পনা গ্রহণ করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবী জানিয়ে’ বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ আয়োজিত মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে নদী ভাঙন, তা নিছক প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া নয়৷ দীর্ঘ অবহেলা ও পরিকল্পনাহীনতা কিংবা উন্নয়নের ভ্রান্ত মডেলই আমাদের গ্রাম ও শহরগুলোকে নদীর করাল গ্রাসের কাছে বিপন্ন করে তুলেছে৷ নদীকে বশে রাখতে হলে একদিকে যেমন পাড় বাঁধতে হয়, অন্যদিকে প্রয়োজন হয় প্রবাহ যাতে মাঝনদী বরাবর থাকে, প্রবাহের জন্য যাতে পর্যাপ্ত গভীরতা থাকে; সেই ব্যবস্থা করা৷ দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশে নদী শাসনের কাজ বরাবরই ‘একচোখা’৷ পাড় বাঁধার দিকে যতটা মনোযোগ দেওয়া হয়, প্রবাহকে মাঝনদীতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তার সিকিভাগও নয়৷ তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙনের মতো প্রকল্পে ঠিকাদারি চক্র, ঘাটে ঘাটে কমিশন, বখরা – এ সব তো এখন ‘ওপেন সিক্রেট’৷ এর বাইরে কাজ ও উপকরণের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে৷ ঘূর্ণায়মাণ ‘পানির নীচে’ কী ধরনের ‘কাজ’ হয়, কে দেখতে যাবে! বস্তুত নদী ভাঙন রোধে বরাদ্দ অর্থের সদ্ব্যবহারের বিকল্প নেই৷ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে সীমাবদ্ধ সম্পদ এভাবে ভাঙন ঠেকানোর নামে ক্ষয় হয়ে যাবে, রাষ্ট্রীয় অর্থে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পকেট ভারি হবে; মেনে নেওয়া যায় না৷ আর দীর্ঘমেয়াদে হলেও, নদী ভাঙন রোধের প্রচলিত, গতানুগতিক, শতাব্দীপ্রাচীন ধারা থেকে বের হয়ে আসতেই হবে৷ মানববন্ধনে বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিলের সভাপতিত্বে সংহতি প্রকাশ করে আরো বক্তব্য রাখেন ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান মোসতাক আহমেদ, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আ হ ম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, বাংলাদেশ জাসদ নেতা হুমায়ুন কবির, নবাব তাহের উল্লাহ ও নারী নেত্রী এলিজা রহমান। সভাপতির বক্তব্যে এম এ জলিল বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লক্ষ লোক দারিদ্র হয়ে যায়। নদী ভাঙন বন্যার কারণে ঘর বাড়ী জমি জমা হারিয়ে ফেলে। এই লোকদেরকে রক্ষা করার লক্ষে বন্যা নিয়ন্ত্রন ও নদী ভাঙন রোধ কমিশন গঠন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশেষভাবে আবেদন জানাচ্ছি। সাথে সাথে তিনি আরো বলেন যে, প্রতিবছর নদী ভাঙন রোধ বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য যে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়, তা হিসাব করলে দেখা যায় শূন্যের কোঠায়। তাই তিনি বলতে চান নদী ভাঙন রোধের জন্য কোন প্রকারেই পাথর বালু নদীদে ফেলানো চলবে না। নদী ভরাট করা চলবে না। বরং বাংলাদেশের প্রতিটি নদীতে পরিকল্পিতভাবে নাব্যতা বজায় রাখতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে বাঁধের কথা বলা হয় তা কোন কাজে আসে না।তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই বাংলাদেশে যত নদী আছে সেই নদীগুলোকে নাব্যতা বজায় রেখে পানি শাসন করে নদীগুলোর দুই পাড়ে বেড়ীবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। স্থান ভেদে বেড়ীবাঁধ গুলো চওড়া ও উচ্চতা নির্ণয় করুন। আরো একটি বিশেষ কাজ করতে হবে সেটি হলো নদীগুলোকে যতদূর সম্ভব লম্বা লম্বিভাবে নাব্যতা বজায় রাখতে হবে। যেখানে নদীগুলো বেকেঁ গেছে, সেখানে পরিকল্পিতভাবে পাইলিং করে দেওয়াল নির্মাণ করতে হবে। যাতে নদীর  স্রোতে কোন প্রকারে নদীর পাড়ের মাটি বা বালু ধুইয়ে না নিতে পারে। এই কাজ করতে পারলেই প্রতিবছর ৩ লক্ষ লোকের দারিদ্র থেকে রক্ষা করতে পারবে। তবেই স্বার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও বাস্তবায়িত হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার আকাঙ্খা।এম এ জলিল বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী ভাঙন রোধ করি। নদী ভাঙন রোধের লক্ষে পাথর বালু ফেলানোর পরিকল্পনা চলবে না। পাথর বালু ফেলানোর জন্য প্রতিবছর যে বাজেট হয় তাদিয়ে যতদিন পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধ করা না যাবে, ততদিন পর্যন্ত নদী ভাঙনের কবলে যারা পরে তাদের ক্ষতিপূরণ দিলেই ঐ মানুষগুলো দারিদ্র মুক্ত হবে।

Share.