নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ: ফখরুল

0

ঢাকা অফিস: সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের ব্যবস্থা না করতে পারার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ বলে কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে যে নির্বাচন কমিশন আছে এদের লজ্জা শরম হায়া বলতে কিচ্ছু নাই। এটা একটা ঠুঁটো জগন্নাথ।’ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ঢাকা-৫ ও সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত সব উপনির্বাচন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলছে, ঢাকা-৫ আসনে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা মনে করি ৫ পার্সেন্ট ভোটও পড়েনি। তারা বলছে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। একটা মানুষের তো লজ্জা শরম হায়া থাকে, এদের তাও নাই। কমিশন অবলীলায় বলে যায়, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন এখন একটা তামাশায় পরিণত হয়েছে বহু আগে থেকেই। গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে’, কথাটা তো তিনি মিথ্যা বলেননি। এই নির্বাচন তো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে ২০১৪ সাল থেকেই।’ ওবায়দুল কাদেরের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন ক্ষমতায় এসেছেন এরপর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের জনগণ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য সমস্ত ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছেন, পুলিশকে ব্যবহার করেছেন, র‌্যাবকে ব্যবহার করেছেন, বিডিআরকে ব্যবহার করেছেন এবং দুর্ভাগ্য যে সশস্ত্র বাহিনীকে আমরা কখনও বিতর্কিত হতে দিতে চাইনি। তাদেরকেও আপনারা মাঝেমধ্যে ব্যবহার করতে চেয়েছেন।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়, এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদ নয়। তার প্রমাণ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের মা-বোনেরা কেউ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে না। এর জন্য দায়ী কে? এসব সরকারের ব্যর্থতা। সরকারের মতের সঙ্গে যাদের মিল না হয় তাদেরকে হয় গুম কিংবা হত্যা করা হয়। কিছু কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তারা অনেক সময় দেখামাত্রই গুলি করে দিচ্ছে মানুষকে। হত্যা করার পর বলা হয় মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চোরাকারবারি ও জঙ্গি।’ এসময় কক্সবাজারের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা হত্যার প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে যে থানার ওসি জড়িত ওই থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে নাকি ২১৪ জন হত্যাকাণ্ড হয়েছে। কোথায় যাবে মানুষ? যাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে রক্ষা করা তারাই এখন মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে, না হয় হত্যা করে।’ বক্তব্যে নির্বাচনে ভোট ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন ফখরুল। বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন- এমন নির্বাচন হয় তবুও আপনারা নির্বাচনে যান কেন? আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে নির্বাচনে গিয়ে বারবার প্রমাণ করতে চাই, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, হয় না।’ নির্বাচন কমিশনে দুর্নীতি হচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, দুর্নীতি কোথায় নাই? সারা বাংলাদেশ এখন দুর্নীতির আখড়া। ‘আমাদের সংগ্রামটা খুব কঠিন সংগ্রাম। একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেজন্য আমরা খুবই স্পষ্ট করে বলেছি, টালবাহানা না করে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করুন। অতীতের সকল নির্বাচনকে বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। এটাই একমাত্র সমাধান।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস, ধর্ষণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি সবকিছুই নির্ভর করছে একটা নির্বাচিত সরকারের ওপর। নির্বাচিত সরকার ছাড়া এসব সমস্যার সমাধান হবে না। মসনদে বসে তারা মনে করছে খুব ভালোভাবে দেশ চালাচ্ছে। অবলীলায় মিথ্যা বলতে থাকে তারা, যত পরিসংখ্যান দেয় সব মিথ্যা।’ এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নেতাকর্মী ও তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল। বলেন, যুবক-তরুণ ছাত্রদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে হবে।’মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।

Share.