প্লাজমা দিয়ে করোনার চিকিৎসায় সাফল্য

0

ডেস্ক রিপোর্ট: পদ্ধতিটা পুরনো। কিন্তু করোনা রুখতে সেই পুরনো চিকিৎসাতেই প্রাথমিক সাফল্য পেলো দিল্লি। বিশ্ব জুড়েই করোনার টিকা ও ওষুধ বের করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনার চিকিৎসা করার প্রয়াসও চলছে। দিল্লিতে সরকারি চিকিৎসকরা সেরকমই একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনার চিকিৎসায় প্রাথমিক সাফল্য পেলেন। ডাক্তারি ভাষায়, এই পদ্ধতির নাম হলো প্লাজমা থেরাপি। সহজে ব্যাখ্যা করা যাক। যাঁদের করোনা হয়েছিল এবং সেরে উঠেছেন, তাঁদের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বা রক্তে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়, যা ওই ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে।  প্লাজমা পদ্ধতির অর্থ হল, ওই ব্যক্তিদের রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে করোনা আক্রান্তের শরীরে দেওয়া। যাতে রোগীর শরীরেও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। প্রাথমিকভাবে দিল্লিতে চারজনের প্লাজমা থেরাপি হয়েছিল। তার মধ্যে যে দুইজন রোগীর দেহে আগে প্লাজমা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা এখন প্রায় সুস্থ। দিন দুয়েকের মধ্যে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারবেন। এই দুইজন রোগীকেই ভেন্টিলেটারে পাঠাবার মতো অবস্থা হয়েছিল। বাকি দুইজনকে পরে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। তাঁদেরও শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এই অবস্থায় আরও বেশি করে রোগীর প্লাজমা থেরাপি করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।দিল্লির লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে প্লাজমা দিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। এর দায়িত্বে আছেন চিকিৎসক এস কে সারিন। তিনি জানিয়েছেন, ”করোনার তিনটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায়ে করোনা আক্রান্তের জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, দুর্বলতা দেখা দেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা ফুসফুসকে আক্রমণ করে। তৃতীয় পর্যায়ে করোনার কারণে দেহের অনেকগুলি যন্ত্র আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের রোগীদের প্লাজমা থেরাপি করা হচ্ছে। চারজন রোগীর ক্ষেত্রে এই থেরাপি সফল হয়েছে। আরও তিনজনকে শুক্রবার প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসা করা হবে।” সারিন জানিয়েছেন, ”এ ক্ষেত্রে একটাই সমস্যা। প্লাজমা জোগাড় করা। প্লাজমা তাঁদের কাছ থেকেই পাওয়া যাবে, যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন। তাঁদের এগিয়ে আসতে হবে। প্লাজমা নেওয়ার পদ্ধতিও খুব সহজ। যিনি দেবেন, তাঁর কোনও ক্ষতি হবে না। যত বেশি প্লাজমা পাওয়া যাবে, তত বেশি রোগীর শরীরে তা দেওয়া সম্ভব হবে।”প্রশ্ন হলো, প্লাজমা থেরাপি দিয়ে করোনা সারিয়ে তোলা কি সম্ভব? সারিনের বক্তব্য, ”এটা নতুন কোনও পদ্ধতি নয়। যে রোগের ওষুধ থাকে না, সেখানে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। ১৯০১ সালে এই ভাবে ডিপথিরিয়ার চিকিৎসা হয়েছে। করোনার কোনও ওষুধ নেই। তাই প্লাজমা দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে।” চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ” চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এত তাড়াতাড়ি রায় দেওয়া যায় না। এটা ঠিক, প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। এখন আরও অনেকের ওপর তা প্রয়োগ করতে হবে। তারপর যাঁদের প্লাজমার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হলো এবং যাঁদের করা হয়নি, দুই ধরনের ঘটনা তুলনা করে দেখতে হবে। এই গবেষণায় সময় লাগে। অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর লাগবে। এত তাড়াতাড়ি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।  তবে প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে, এটা নিঃসন্দেহে খুবই ভালো ব্যাপার।” এরই পাশাপাশি দিল্লি আইআইটি কম দামে করোনা পরীক্ষার কিট তৈরি করার অনুমোদন পেয়েছে। আইআইটির দশজন অধ্যাপক ও গবেষক এই কিট তৈরি করেছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ বা আইসিএমআর তাঁদের এই কিটকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ব্যাপকভাবে তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। তাঁরা এখন একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে দ্রুত উৎপাদন শুরু করে দিচ্ছেন। আইসিএমআর আপাতত চীনের থেকে কিট আমদানি বন্ধ রেখেছে। চীনা কিট নিয়ে প্রচুর অভিযোগ আসায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইআইটির কিট বাজারে এসে গেলে, দেশে কিটেরও অভাব হবে না।

Share.