বাঁশের ঠিকা দিয়ে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

0

বাংলাদেশ থেকে জামালপুর প্রতিনিধি:  জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার সরকারি মেলান্দহ কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভবন এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে, সবসময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে ভবনটি দূর থেকে দেখে বিষয়টি বোঝার উপায় নেই, কিন্তু ভেতরে গেলে চোখে পড়ে ছাদে ও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ার চিত্র। দেখা মেলে আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরাও। কলেজের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, কলেজের দুইটি ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। গত ৮ বছর আগে কলেজের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পরে ২০১৬ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পরে পুরাতন ভবন সরেজমিনে পরিদর্শন করেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে জানানো হয় ভবনটির অফিস রুম, কন্ট্রোল রুমের ছাদ যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভবনটির অফিস রুম ও কন্ট্রোল রুম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যবহার না করার জন্য বলা হয় এবং অন্য রুম মেরামতের শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহারের অনুমতি দেন জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলান্দহ সরকারি কলেজের বিজ্ঞান ভবন, প্রশাসনিক ভবন‌সহ দুইটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনে শ্যাওলা জমে রয়েছে। বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় ও দ্বিতীয় তলায় ভবনের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। বেরিয়ে গেছে ভেতরের বড়। পিলারে ফাটল ধরেছে। জানালা দরজাগুলো ভেঙে পড়েছে। ভবনে প্রবেশ পথের প্রথম গেট ভেঙে পড়ে আছে। প্রশাসনিক ভবনের একটি রুমে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, পলেস্তারা যেন খসে না পড়ে তার জন্য কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ঠিকা দিয়ে রেখেছে। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী লিনা আক্তার বলেন, ক্লাসে ঢুকলে ভয় লাগে, কখন যেন ভেঙে পড়ে। আতঙ্ক নিয়ে কি ক্লাস করা সম্ভব.? যদি কোন সময় ভূমিকম্প হয় সাথে সাথে ভেঙে পড়বে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করে যাচ্ছি। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আল্লাহ না করুক আমারও দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, আমার যেদিন প্রথম ক্লাস হয়, ওই দিন চোখের সামনে ক্লাস রুমের জানালা ভেঙে পড়ে। কিছুদিন আগে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পানি রুমে পড়তে শুরু করে। পরে ওই রুম থেকে অন্য রুমে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। সব ক্লাস রুমের একই অবস্থা প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী লিটন বলেন, ভেঙে পড়ার ভয়ে বাড়ি থেকে কলেজে আসতে দেয় না মা। কখন যেন ভেঙে পড়ে এই আতঙ্ক সব সময়। কলেজের সব ক্লাস রুমে একই অবস্থা প্রায়। সিঁড়ির ছাদ থেকেও প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। ভেঙে পড়ার ভয়ে মাঝে মধ্যে ক্লাস করি। কলেজে শিক্ষক ও কম। শিক্ষকের আসার কিছুদিন পরেই কলেজের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ দেখে অন্য কলেজে চলে যাচ্ছে। আমিনুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমি একদিন কলেজে গিয়েছিলাম এক দরকারে। গিয়ে দেখি ছাদ থেকে ক্লাসরুমে পানি পড়ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্লাস্টার খসে পড়ে রড দেখা যাচ্ছে। তারপর থেকে আমার ছেলেকে আর কলেজে যেতে দেয়নি। টিসি নিয়ে অন্য কলেজে ভর্তি করিয়ে দিব এখন। পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন,সব সময় আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করাতে হয়। কখন যেন কি ঘটনা ঘটে। আমাদের সব সময় আতঙ্কে দিন কাটে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মেলান্দহ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাসান তৌফিক মো. আলী নূর বলেন, বর্তমানে সরকারি কলেজের অবকাঠামো অত্যন্ত নাজুক। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক ভবনের একাংশ ও বিজ্ঞান ভবন মৌখিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী ও আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর কলেজে কর্মকর্তার পদ সংখ্যা অত্যন্ত কম। কলেজে অধ্যক্ষসহ ৬২টি পদ থাকার দরকার। রয়েছে মাত্র ১৬ জন কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে জামালপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, কলেজের ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। একটি ভবন ২০০৯ সালে ও ২০১৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণ একটি প্রকল্প আছে। সেই প্রকল্পেতে এমপি মহোদয়ের ডিও লেটারসহ ছয়তলা ভবন করার জন্য প্রস্তাব প্রকল্প পরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

 

Share.