বাগেরহাটে ভেসে গেছে শত শত মৎস্য ঘের, মানুষ পানিবন্দি

0

বাংলাদেশ থেকে বাগেরহাট প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে তিনদিনের বৃষ্টি ও অতি জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের কমপক্ষে ১৫০ গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে কয়েশ মাছের ঘের ও পুকুর। ফলে দুর্ভোগে শতশত মানুষের। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন বলেন, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহায় মানুষের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। পানিবন্দি লোকজনকে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। জানা যায়, মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র তৃতীয় দিনের মতো অতি জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে নিমগ্ন হয়ে আছে। জেলার প্রায় সব নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বেড়েছে। সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ‘তিন দিন ধরে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রধান প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানি বেড়েছে। কমরজলে পানির উচ্চতা ছিল চার ফুট। সাম্প্রতিক সময়ে নদীতে যে হারে পানি বাড়ছে তাতে সুন্দরবনের প্রাণীকুল হুমকির মুখে পড়ছে। বনের বাঘ, শুকর, হরিণ, বানর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বাগেরহাটের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: আজিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মৌসুমি সবজি খেত ডুবে গেছে। দ্রুত এই পানি নেমে না গেলে সবজি চাষিদের বেশ ক্ষতি হবে। তবে এই বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। জেলায় ইতোমধ্যে ৮৭ ভাগ জমিতে আমন ধান রোপন শেষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জ পৌরসভার বেশকিছু এলাকা উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে নদীতীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে। জোয়ারের পানি ওঠা রোধ করতে ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার বড় একটা অংশ নদীর পানি থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া বাগেরহাট সদরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে নদীতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, বেশকিছু এলাকায় ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের নির্দেষ দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জেলার বেশকিছু পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।

Share.