বিএনপি নেতারা এখনও ক্ষমতার রঙ্গীন খোয়াব দেখছে: কাদের

0

ঢাকা অফিস: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নেতারা এখনও ক্ষমতার রঙ্গীন খোয়াব দেখছে। আপনারা খোয়াব যতো পারেন দেখেন, তাতে কোন আপত্তি নেই। দিবা স্বপ্ন তো কত জনেই দেখে, আপনারাও দেখতে থাকেন, তাতে কিছু আসে যায় না। শনিবার (১৯ নভেম্বর) গাজীপুর জেলা শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ক্ষমতার পরিবর্তন হতে হলে নির্বাচনেই হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। দুনিয়ার সব দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনা সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে বিএনপি এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সেইভ এক্সিট নিতে বলে, তারা আমাদের নিরাপদে প্রস্থান নিতে বলে। কিন্তু কোন মুখে তারা এমন কথা বলে। তারা তো আন্দোলন করতেই জানে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশনেত্রী বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। অথচ দেখতে দেখতে ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবীতে একটি মিছিলও বের করতে পারেনি। পনাদের লজ্জা করে না? গণঅভুত্থ্যান করবেন? একটা মিছিল করতে পারেন না। শেখ হাসিনা দয়া করে আপনাদের দণ্ডিত আসামি নেত্রীকে বাসায় থাকতে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা প্রস্তুত হয়ে যান। বিএনপি আবারও আগুন-সন্ত্রাস শুরু করেছে। কাঁচপুর ব্রিজে শেখ হাসিনার উদ্বোধনী ফলক পুড়িয়ে ফেলেছে। এসব আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। এবার খেলা হবে, খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ডিসেম্বরে, আন্দোলনের মোকাবেলা হবে, খেলা হবে ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে। ডিসেম্বরে লাঠির সঙ্গে পতাকা বেঁধে আনবেন? তা হবে না, খেলা হবে, মোকাবিলা হবে।’ ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘বিএনপি শুধু বলে তাদের সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছে। গাজীপুরে আসেন ফখরুল ভাই! দেখেন ঢল কাকে বলে।’ তিনি সিলেটে বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিলেটে ঢল নেই, সুরমা নদীর ঢল। আর এখানে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ। সিলেটের সঙ্গে গাজীপুরকে মিলিয়ে দেখুন। এখানে শুধু মহানগর, আর ওখানে সকল জেলা। মিলিয়ে দেখুন, জনতার ঢল কোথায় বেশী। বিএনপি’র সমাবেশ যেখানে, সেখানে সারা দেশ থেকে ৭ দিন আগে থেকেই তারা রওনা দেন। কেউ কেউ তিনদিন আগে থেকে ঢল নামিয়েছে। কাঁথা বালিশ বিছানা পত্র, হান্ডি পাতিল সব নিয়া নেতাকর্মীরা সরাদেশ থেকে সিলেটে গেছে। যেখানে সমাবেশ সাতদিন আগে থেকে রওয়ানা হয়। কারণ ওখানে শুধু খাওয়া আর খাওয়া। খানাপিনা ভালই চলছে। পাতিলে পাতিলে খাওয়া। গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগীর মাংস, মাছের টুকরা এ আর কী বলব? এরপর পেপসি বা কোকা কোলা। ভালই আছে বিএনপি।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন উন্নয়ন কাকে বলে। পদ্মা সেতু হয়ে গেল নিজের টাকায়। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ট্যানেল চট্রগ্রামের বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, ঢাকায় তরুন প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট মেট্রোরেল, এলেঙ্গা সিক্স লেন এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। শেখ হাসিনা একদিনে ১’শ সেতু উদ্বোধন করে সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের এতো উন্নয়ন দেখে বিএনপির মনে বড় জ্বালা শুরু হয়েছে। মির্জা ফখরুলের বুকে বড় জ্বালা। ফখরুল সাহেবরা কালো চশমা পড়েন, তাই তারা কিছুই দেখতে পান না। তারা দিনের আলোতে অমাবস্যার অন্ধকার দেখে। দিনের আলোতে পূর্নিমা রাতের চাঁদ ঝলমল। সেটা দেখে না। দেখতে পায় অমাবস্যা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা বিষয়ে কাদের বলেন, ‘১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। আর ২১ আগস্টের পরিকল্পনা করে তার ছেলে তারেক রহমান।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাত বছরের সাজা হয়েছে অর্থ পাচারকারী তারেক রহমানের। ভিডিও কনফারেন্সে হাসিনা, হাসিনা বলে। শেখ হাসিনাও বলতে পারেনা। ফখরুল ভইয়ের নেতৃত্বে এদেশেও কিছু এমন রয়েছে। আজ গাজীপুরের সম্মেলন এটা। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে। আপনার সম্মেলন কবে হয়েছে? মনে কী আছে? মনে নেই। ফখরুলও জানে না কবে সম্মেলন। মনে নেই কবে সম্মেলন। আমরা দুইমাসে সম্পাদকমন্ডলী, এক মাসে সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠক করে জেলায় উপজেলায় ওয়ার্ডে সম্মেলন হচ্ছে। বিএনপি তে এসব আছে?’ সাবেক আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে তত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিককে হেনস্তা করেছে, আজকে খালেদা জিয়ার এতিম আত্মসাতের যে মামলা সেই মামলাও তত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল। তাদের নেতা তারেক রহমানকে এমনভাবে পিটিয়েছিল যে বিমানে উঠতে হুইল চেয়ার লেগেছিল। আবার তারাই আজকে তত্ত্বাবধায়ক চাচ্ছে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্য শেষে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. আতাউল্লাহ মন্ডলের নাম ঘোষণা করেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর মহানগর আওয়ামী লীগ শাখার এটিই প্রথম সম্মেলন। এর আগে সবশেষ ২০১৫ সালে গঠিত হয় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শামসুন নাহার ভূঁইয়া, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অধ্যাপিকা রোমানা আলী টুসি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউল্লাহ মন্ডল প্রমুখ।

Share.