বুধবার শি-পুতিনের বৈঠক

0

ডেস্ক রিপোর্ট:  কোভিডের পর প্রথমবার চীনের বাইরে সফর করতে যাচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই সপ্তাহেই সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সদস্য দেশগুলোর বৈঠক হবে কাজাখস্তানে। বৈঠকের ফাঁকে পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈঠক করবেন শি। বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে চীনের ক্ষমতায় শি আবারও নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় আসার তোড়জোড় চালাচ্ছেন। আগামী এক মাস পর চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা রয়েছে। নতুন মেয়াদে যদি শি আবারও প্রেসিডেন্ট হন তাহলে তিনি হবেন মাও সে তুংয়ের পর সবচেয়ে শক্তিশালী চীনা নেতা। কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে শির প্রথম বিদেশ সফর, চীনে ক্ষমতার ওপর তার দখলের ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী এবং বিশ্ব পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সেটাই প্রমাণ করবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, একদিকে ইউক্রেনের আগ্রাসনের ফলে রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল আর অপরদিকে তাইওয়ান নিয়ে পশ্চিমাদের উস্কানি, এসবের ফলে খুঁড়িয়ে চলা বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বুধবার কাজাখস্তানে রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন শি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি প্রাচীন সিল্ক রোড নগরী, উজবেকিস্তানের সমরকন্দ এবং কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সহযোগী ইউরি উশাকভ গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ক্রেমলিন তাদের আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি। চীন এখনও শির ভ্রমণ পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে পারেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন-রাশিয়ার শীর্ষ নেতাদের বৈঠকটি শির প্রভাবকে আন্ডারস্কোর করার সুযোগ দেবে। কারণ পুতিনেরও ঝোঁক এখন এশিয়ার দিকে। পশ্চিমারা যেমন ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে শাস্তি দিতে চাইছে ঠিক তেমনি উভয় নেতাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করতে পারেন বলে ধারণা করা যায়। কেননা ইউক্রেন আর তাইওয়ান ইস্যু পুতিন এবং শিকে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। “রেড ফ্ল্যাগস” বই এর লেখক জর্জ ম্যাগনাস বলেছেন, শি সম্পর্কে আমার ধারণা হলো; জাতিগতভাবে তিনি কতটা কতটা আত্মবিশ্বাসী সেটাই তিনি দেখাতে চান। সেইসঙ্গে পশ্চিমা আধিপত্যের বিরোধিতাকারী দেশগুলির আন্তর্জাতিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চান। ব্যক্তিগতভাবে আমি কল্পনা করি পুতিনের যুদ্ধ চলছে কীভাবে এবং প্রকৃতপক্ষে যদি পুতিন বা রাশিয়া অদূর ভবিষ্যতে কোনও সময়ে খেলতে থাকে সে সম্পর্কে শি সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হবেন। কারণ এখনও মস্কোতে পশ্চিমা বিরোধী নেতৃত্বের প্রয়োজন চীনের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান পরাশক্তি এবং রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ টাইটানের মধ্যে গভীরতর বাধাহীন বন্ধুত্বের প্রভাব দেখা গেছে যা আকর্ষণীয় ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়নগুলির মধ্যে একটি। তাদের এই বন্ধুত্বকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে পশ্চিমারা। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একসময় বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট শ্রেণিবিন্যাসের সিনিয়র অংশীদার রাশিয়াকে এখন পুনরুত্থিত কমিউনিস্ট চীনের জুনিয়র অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্লেষকদের ধারণা পরবর্তী দশকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে দেশ দুইটি। যদিও অংশীদারিত্বে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব প্রচুর। উচ্চ শীতল যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুতর দ্বন্দ্বের সময় পুতিনের প্রতি সমর্থন ত্যাগ করবে শি, এমন কোন লক্ষণ নেই। উল্টো সম্পর্ক আরও গভীর করছেন দুই নেতা। ২০২২ সালের প্রথম ৭ মাসে রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে। ইউএনএসডব্লিউ-এর রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সিনিয়র লেকচারার আলেকজান্ডার কোরোলেভ বলেছেন, এই সফর এটাই প্রমাণ করে যে, চীন শুধু রাশিয়ার সঙ্গে ‘স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা’ চালিয়ে যেতেই ইচ্ছুক নয়, বরং পুতিনের প্রতি সুস্পষ্ট সমর্থন দেখাতে এবং শক্তিশালী চীন-রাশিয়া সম্পর্ক গঠনকে ত্বরান্বিত করতে ইচ্ছুক। তিনি আরও বলেন, ‘গুরুতর কূটনৈতিক সংকট এবং সেকেন্ডারি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যে পরিণত হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও বেইজিং মস্কো থেকে নিজেকে দূরে রাখতে অনিচ্ছুক।’

Share.