ঢাকা অফিস: ডাকসু ভবনে হামলায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভিপি নুরুল হক নুরসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ৮ নেতাকর্মীর শারীরিক অবস্থার তথ্য লুকোচুরির অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা। এসময় আহত এপিএম সুহেলসহ কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিন ইয়ামিন মোল্লা অভিযোগ করেন, ‘‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দীন আহতদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি করছেন। তিনি প্রথম দিকে বলেছেন, ‘আহত যারা ভর্তি রয়েছেন, তাদের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন নয়, আশঙ্কাজনক নয়, দু’তিন দিনের মধ্যে তারা আস্তে আস্তে রিলিজ পেয়ে যাবে।’ কিন্তু এরপর আমরা দেখেছি, আহত সুহেলকে হঠাৎ একদিন সিটি স্ক্যানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং এরপরে তার মাথায় জমাট বাঁধা রক্ত সরানোর জন্য সার্জারি করা হয়। সার্জারির পর এখন তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে বলে গতকাল ডাক্তার আমাদের জানিয়েছেন। তাকে এভাবে আরও ২ মাস বেডে শুয়ে থাকতে হবে। এরপর মাথার চিকিৎসা হয়ে গেলে তার হাড়ে চিকিৎসা করা হবে।’’ চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এপিএম সুহেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এভাবে আহত আরিফ সম্পর্কে জানানো হয়েছে, তিনি কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু গতকাল ডাক্তার আমাদের জানিয়েছেন, আরিফের কিডনির ৭০ শতাংশ অকেজো হয়ে গেছে। তার কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় যদি কিডনি ভালো না হয়, তাহলে তাকেও কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া আহত মেহেদি হাসানেরও ২৫ শতাংশ কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। তাকেও ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। এদিকে, ভিপি নুরুলের ছোট ভাই আমিনুলও কিছুক্ষণ পরপর আবোল-তাবোল বলছেন। চিকিৎসকরা কেন আমাদের কাছে এবং দেশবাসীর সামনে তাদের শরীরিক সমস্যা ও চিকিৎসার বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছেন না জানতে চান বিন ইয়ামিন মোল্লা। আহতদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আহতদের বাস্তব শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মেডিক্যালের ডিরেক্টরের বক্তব্যের আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর ঢাবির ডাকসু ভবনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় নুরসহ ২০ থেকে ২৪ নেতাকর্মী আহত হন। এদের মধ্যে আটজন এখনও ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ভিপি নুরসহ আহতদের নামে যে মামলা করা হয়েছে সেগুলোকে মিথ্যা অ্যাখ্যা দিয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। একইসঙ্গে মামলার মাধ্যমে নীল নকশা তৈরি করে নুরুল হক নুরসহ এসব নেতাকে কারা অন্তরিন করার ষড়যন্ত্র চলছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তারা। এক প্রশ্নের জবাবে বিন ইয়ামিন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিতকে ইস্কন এবং র’য়ের এজেন্ট বলার অভিযোগ তুলে ভিপি নুরুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে। সনজিত যে র’য়ের এজেন্ট নয়, তা সে প্রমাণ করুক। আর ভিপি নুরুলকেও সব সময় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা জামায়াত-শিবির বলে আসছে। ভিপি নুরুল যে জামায়াত-শিবির, এর কী প্রমাণ তাদের কাছে আছে? সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকারের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান, মশিউর রহমান প্রমুখ।