ভিসি’র দুর্নীতির প্রমাণ দিতে না পারলে অভিযোগকারীদের শাস্তি দেয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

0

ঢাকা অফিস: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। ক্লাস বর্জন, ভাঙচুর, অবরোধ চলছে। এগুলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, ছাত্র-শিক্ষকরা এসব কেন করবে?’ তিনি বলেন, ‘ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ তুলেছে, এর সুনির্দিষ্ট তথ্য তো তাদের কাছে থাকার কথা। তারা যদি অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদেরও সাজা হবে। যে মিথ্যা অভিযোগ করবে, তার শাস্তি হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দুস্থ ও অসচ্ছল সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠান হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসন আছে। কিন্তু প্রতিবছর আমরা ভর্তুকি দেই। এরপরও ক্লাস বন্ধ থাকে, এটা কেন। বুয়েটে আবরার হত্যার ঘটনার পর যা যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা নিলাম। এরপরও আন্দোলন কেন। এরকম চললে ক্লাস বর্জন করলে সাথে সাথে এক্সপেল করতে হবে। ক্লাস কেন বন্ধ থাকবে? দিনের পর দিন আন্দোলন ও ক্লাস বন্ধ কেন?’তিনি বলেন, ‘কোনও উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হলেই আন্দোলন কেন? অন্য শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট কেন? দেশে শিক্ষার একটা পরিবেশ তৈরি করেছিলাম। সেটা নষ্ট করার চক্রান্ত হচ্ছে। দেশের মানুষের সচ্ছলতা এসেছে, উন্নয়ন এসেছে। তাহলে অভিযোগটা কী? আমরা তো কাজ করে যাচ্ছি। সবকিছু ইচ্ছেমতো তো হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ যারা ছাত্র তারা কাল থাকবে না। তাহলে ভাঙচুর কেন? যাদের জন্য কাজ, তারাই যদি ভাঙে তাহলে আমরা কাজ করবো কীভাবে? এগুলো সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা উচিত। এসবের পেছনে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ আছে। উন্নয়ন অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার এসব ভালো লাগছে না। তবে আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় তিন মাস ধরে আন্দোলন চলছে। অক্টোবরের শেষ থেকে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছিলেন। ফলে কার্যালয়ে যেতে পারছিলেন না উপাচার্য। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় আট জন শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এই হামলার পর বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে পুলিশ, জাবি শাখা ছাত্রলীগ, প্রশাসনপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া পাহারায় নিজ গাড়িতে করে বাসভবন থেকে বের হন উপাচার্য। পরে সেখান থেকে নতুন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। উপাচার্য তাকে ‘মুক্ত’ করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগের হামলার পর জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যান। বুধবার কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দেয়, শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই নির্দেশও প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

Share.