মারা গেলেন কামরান: জনপ্রিয়ত‌ায় নজির গড়েছিলেন তিনি

0

ঢাকা অফিস: করোনায় আক্রান্ত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মারা গেছেন। (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। গত ৫ জুন কামরানের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। পরদিন হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়াতে গত ৭ জুন সন্ধ্যায় তাকে সিএমএইচে আনা হয়। বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন তৃনমুল থেকে ওঠে আসা এক রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন সিলেট নগরীর ছড়ারপারের বাসিন্দা।প্রথম নির্বাচনে অংশনেন ১৯৭৩ সালে। তৎকালীন সিলেট পৌরসভার ৩ নং তোপখানা ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল কামরানের পথচলা।১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন । সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর ২০০২ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং ২০০৩ সালের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন । ২০০৮ সালে কারাগারে থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশনেন । সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর চেয়ে ৮৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান।২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে প্রায় ৩৫ হাজর ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। এর আগে পর্যন্ত কখনো কমিশনার, দুই দফা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ২ দফা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান। ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচন ছিল তাঁর জীবনের সর্বশেষ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি তিনি।২০০৪ সালের ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর তালতলাস্থ গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন। অনেকের সাথে সে দিন আহত হয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি। বিভিন্ন সময়ে তিনি শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন কামরান। সিলেট নগরীর সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির একটি অধ্যায়ের অবসান হলো। দীর্ঘ সময় ধরে সিলেটে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে মিষ্টভাষী কামরান সবার সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহারের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার অনন্য নজির গড়েছিলেন; যা সিলেটের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এককথায় সিলেটে আওয়ামী লীগ আর কামরান যেন ছিল একে অপরের পরিপূরক, অবিচ্ছেদ্য নাম।কামরানের জন্ম ১৯৫১ সালে। ১৯৬৯ এর উত্তাল সময়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। ৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় তৎকালীন সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার নির্বাচিত হয়ে রীতিমতো চমক দেখান। সেই থেকেই সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন কামরান। টানা ১৫ বছর সিলেট পৌরসভার কমিশনার ছিলেন। এরপর কিছুদিন প্রবাসে থাকায় একবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। ফিরে এসে ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে পৌরসভা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন হলে মেয়রের দায়িত্ব পান কামরান। ২০০৩ সালে নির্বাচন সিলেট সিটি করপোরেশন গঠিত হলে, সেখানে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ২০০৮ সালে কারান্তরীণ অবস্থায় নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। যদিও পরবর্তীতে ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মেয়র নির্বাচিত হতে পারেননি। ১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন কামরান। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৫ ও ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে পর পর দুবার মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। সবশেষ ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি মহানগর সভাপতির দায়িত্ব হারান। সবশেষ দুটি কাউন্সিলে কামরান আওয়াম‌ী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।  মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা হয়েও দলের প্রয়োজনে পুরো সিলেট বিভাগ চষে বেড়িয়েছেন। প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনে সিলেটের বিভিন্ন আসনের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে সরব ছিলেন। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন।  সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র কামরান নগরবাসীর কাছে ‘মেয়র সাব’নামে পরিচিত ছিলেন। কামরান দীর্ঘ তিন দশক সিলেট শহর ও পরবর্তীতে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। রোববার জনপ্রিয় এই নেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির একটি অধ্যায়ের অবসান হলো।

Share.