ঢাকা অফিস: চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত এই তের দিনে ময়মনসিংহ জেলার পাঁচ উপজেলায় ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের ঘটনার শিকার হয়েছেন খালুর হাতে ভাগ্নি, শ্বশুরের হাতে পুত্রবধূ, স্কুল-কলেজ ছাত্রী, শিশু ও কিশোরী। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে একটি ধর্ষণের ঘটনায় সালিশেই রক্ষা পেয়ে যায় ধর্ষক। পুলিশ প্রতিটি মামলাতেই আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবুও এমন অপরাধের ঘটনা কমছে না। ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পিঠাসূতা গ্রামে গত ৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে ছেলের অনুপস্থিতিতে এক সন্তানের মাকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর রুহুল আমীন (৫৫)। এ ঘটনায় ৯ নভেম্বর থানায় মামলা করেন ধর্ষিত গৃহবধূ। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে তারাকান্দা থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, পিঠাসুতা গ্রামের ওই গৃহবধূর স্বামী স্থানীয় একটি স’মিলের শ্রমিক এবং তিনি বাকপ্রতিবন্ধী। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি মিলে কাজ করেন। এ সুযোগে ছেলের বউকে তিনি ধর্ষণ করেন। তিনি আরও জানান অভিযুক্ত রুহুল আমিনকে ১৩ নভেম্বর রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ভাগ্নিকে (স্ত্রী বোনের মেয়ে) একাধিকবার ধর্ষণ করেন খালু সোহাগ মিয়া (৩৫)। এ ঘটনায় গত ৯ নভেম্বর ওই মেয়ের মা মামলা করেন। পরে পুলিশ ১০ নভেম্বর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রাম থেকে অভিযুক্ত সোহাগ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।গৌরীপুর থানার ওসি বোরহান উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ধর্ষক সোহাগ গ্রেপ্তার হয়ে এখন জেল হাজতে। অন্যদিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী একই একই গ্রামের প্রতিবেশি আব্দুল মন্নাছের পুত্র আবদুল্লাহকে বিদ্যালয়ে থেকে পরীক্ষার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট এনে দিতে বলে। পরে ১১ নভেম্বর বুধবার রাতে অ্যাসাইনমেন্টটি ছাত্রীকে দেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে ডেকে বাড়ির সামনে নিয়ে তাকে ধষর্ণ করে। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার ভুলসোমা গ্রামে। ধর্ষিতার পরিবার বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হলে সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় লোকলজ্জার ভয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যার হুমকি দেয় বলে জানান তার বাবা-মা। অপরদিকে ঈশ্বরগঞ্জে বাড়িতে ডেকে নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে প্রতিবেশি এক কিশোর। ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকালে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের দত্তপাড়া কালীবাড়ি রোডে ধর্ষণের এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থীর বাবা ১১ নভেম্বর থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ধর্ষিতার মা বাসায় ছিলেন না। এ সুযোগে পাশের বাসার গোপাল গৌড়ের ছেলে শাওন গৌড় (১৯) শিশুটিকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুটির মা বাসায় ফিরে মেয়েকে না পেয়ে ডাকাডাকি করার পর শিশুটি ধর্ষকের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মায়ের কাছে তার নির্যাতনের বিষয়টি জানায়। এছাড়াও ঈশ্বরগঞ্জে এক গৃহবধূকে (৩২) বসতঘরের বারান্দা থেকে প্রতিবেশি চাচাশ্বশুর তুলে নিয়ে নির্জন স্থানে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল কাদের মিয়া উভয় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় ১নভেম্বর রবিবার রাতে ওই নারী চাচাশ্বশুরের বিরুদ্ধে এবং শিশুটির বাবা ১১ নভেম্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার আসামি এখন কারাগারে। অপর ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও তার বাবা-মা শনিবার রাতে থানায় এসছিলেন। ওই ঘটনারও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ময়মনসিংহের নান্দাইলে ধর্ষণের আগে কবিরাজ এক নারীকে বলেন, এর আগে ৭ জন নারীকে আমার ডেরায় এনে নিখোঁজ করেছি। তুই ৮ নাম্বার। এমন ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা নারীকে গত ৪ নভেম্বর ধর্ষণ করেন কবিরাজ। ওই নারী এক বান্ধবীর পরামর্শে ওই কবিরাজের কাছে এসেছিলেন। এদিকে নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের বেলতৈল গ্রামে প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে তার চাচাতো ভাই মো. হুমায়ুন প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। এ অবস্থায় ১১ নভেম্বর বুধবার সকালে ওই কিশোরীর বাড়িতে কেউ না থাকায় হুমায়ুন তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে হুমায়ুন চলে যেতে চাইলে তাকে জাপটে ধরে চিৎকার দেয় ওই কিশোরী। পরে স্থানীয়রা হুমায়ুনকে আটক করে থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করে। অপরদিকে গত ১ নভেম্বর রবিবার সকালে নান্দাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর রসুলপুর গ্রামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর ঘরে এসে ধর্ষণ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের বিজয়পুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে নুরে আলম (১৭)। পরে তাকে ধরে আটকে রাখে পরিবারের লোকজন। দিনভর আটকের পর রাতে মেয়ের বাড়িতেই সালিশ বসায় স্থানীয়রা। সালিশে দুই লাখ টাকা রফায় আগামী এক মাসের মধ্যে বিয়ে করবে শর্তে অভিযুক্তকে রক্ষা করা হয়। নান্দাইল মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, এ ঘটনায় ওই নারী গত ৮ নভেম্বর মামলা করেছেন। ধর্ষক কবিরাজ মুক্তোল হোসেন এখন জেল হাজতে রয়েছেন। তার বাড়ি নান্দাইল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায়। অপরদিকে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া যুবক হুমায়ুনও জেল হাজতে। অপর ঘটনাটির বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। গত ১ নভেম্বর রাতে ময়মনসিংহে মোবাইলে ভিডিও দেখানোর কথা বলে অপু (২৪) নামে প্রতিবেশি এক চাচা ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে। অপু ময়মনসিংহ নগরীর মালগুদাম এলাকার বাসিন্দা। এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় শিশুটির পরিবার থেকে ২ নভেম্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে ১৩ দিনে ১০ ধর্ষণ!
0
Share.