শরণার্থীদের জোর করে সিরিয়ায় ফেরত পাঠাচ্ছে তুরস্ক?

0

ডেস্ক রিপোর্ট: সহিংসতার হুমকি দেওয়া অথবা কৌশলে ‘স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার’ চুক্তিতে স্বাক্ষরের পর নিজেদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ফেরত যেতে বাধ্য হচ্ছে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া শত শত সিরীয় শরণার্থী। শুক্রবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ শরণার্থীদের ফিরতে বাধ্য করার অন্তত ২০টি ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়েছে। সিরিয়ায় আট বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির প্রায় ৩৬ লাখ শরণার্থী তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে।তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের সাহায্য করতে ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ৫২০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে আঙ্কারা। তবে এসব শরণার্থী ক্রমেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি সিরিয়ায় অভিযান চালানোর আগে এরদোয়ান জানান সীমান্ত এলাকায় ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠা করে ২০ লাখ সিরীয় শরণার্থীর পুনর্বাসন করতে চান তিনি। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, ৩ লাখ ১৫ হাজার সিরীয় শরণার্থী স্বেচ্ছায় সিরিয়ায় চলে গেছে। তবে জোর করে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো অবৈধ। কারণ এতে তারা মানবাধিকার হরণের শিকার হওয়ার সত্যিকার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন বলছে, তারা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিরিয়ায় ফেরত যাওয়া শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এসব সাক্ষাৎকারে শরণার্থীরা জানিয়েছে ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার আগেই তুর্কি কর্তৃপক্ষ শরণার্থীদের হাতকড়া পরিয়ে বাসে তুলে সিরিয়ায় ফেরত পাঠিয়েছে। সাক্ষাৎকার দেওয়া শরণার্থীদের কেউ কেউ বলেছেন, স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়া নথিতে স্বাক্ষর করতে তাদের মারধর বা হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্যরা বলেছে, তাদের একটি রেজিস্ট্রেশনের কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। এর বিনিময়ে তাদের একটি কম্বল দেওয়া হয়েছে। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, কতজন শরণার্থীকে এভাবে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার কোনও আনুষ্ঠানিক তথ্য নেই। তবে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই ধরণের শত শত ঘটনা ঘটতে পারে। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে সিরিয়ার আলেপ্পোর কাশিম (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, তাকে তুরস্কের কনিয়া শহরের একটি থানায় ছয় দিন আটক রাখা হয়। সেখানে কর্মকর্তারা তাকে বারবার বলেছে, পছন্দ তোমার। হয় এক, দুই মাস বা এক বছর কারাগারে থাকো অথবা সিরিয়ায় চলে যাও। আরেকটি ঘটনায় সিরীয় খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী জন বলেন, তাকে অভিবাসন কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘যদি তুমি আইনজীবী চাও তাহলে আমরা তোমাকে ছয়-সাত মাস জেলে রাখবো আর মারবো’। গ্রিস পৌছানোর চেষ্টার সময় তাকে তাকে আটক করে তুরস্কের কোস্টগার্ড। পরে তাকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। সিরিয়ায় যাওয়ার পর তাকে ইদলিবে আটক রাখা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শরণার্থী ও অভিবাসী অধিকার বিষয়ক গবেষক আন্না সিয়া বলেন, শরণার্থীরা সরাসরি সিরিয়ার সংঘাতে ফিরে আসছে বলে তুরস্ক যে দাবি করছে তা বিপদজনক ও অসৎ। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের সঙ্গে কৌশল খাটিয়ে বা জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তুরস্ক আট বছরের বেশি সময় ধরে ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য তবে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আইন অমান্য করতে তারা এই উদারতাকে ব্যবহার করতে পারে না।

Share.