শুরু হলো সবচেয়ে বড় কলেরার টিকাদান কর্মসূচি

0

ঢাকা অফিস:  রাজধানীর পাঁচটি এলাকায় শুরু হয়েছে ডায়রিয়া-কলেরা নিয়ন্ত্রণে কলেরা টিকাদান কর্মসূচি। যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলেরা টিকাদান কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় রাজধানীর ৫ টি এলাকার প্রায় ২৪ লাখ বাসিন্দাকে টিকা দেয়া হবে। রবিবার থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত মুখে খাওয়ার এ কলেরার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। প্রতি এক হাজার বাড়ির জন্য একটি টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইপিআই কর্মসূচিতে ব্যবহৃত টিকাদান কেন্দ্র, সূর্যের হাসি ক্লিনিকও রয়েছে। বৃহৎ এ কর্মযজ্ঞ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত প্রথম ডোজ কলেরা টিকাদান কর্মসূচি চলবে। এ কর্মসূচির আওতায় যাত্রাবাড়ীর প্রায় ৫ লাখ, সবুজবাগের প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার, দক্ষিণখানের প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার, মিরপুরের প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার ও মোহাম্মদপুরের প্রায় ৪ লাখ বাসিন্দাকে কলেরার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। মানুষজনকে টিকা নিতে উদ্ধুদ্ধ করতে স্থানীয় পর্যায়ে করা হচ্ছে মাইকিং। এসব এলাকার প্রায় ৭০০টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বিতে এ টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ছাড়াও অনলাইনে যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিরেক্টর ড. ফেরদৌসী কাদরী এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আইসিডিডিআর,বি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-সহ অন্যান্য দেশি ও বিদেশি সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা। এসময় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, মন্ত্রী বলেন, আমরা প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে মুখে খাওয়ার টিকা দেবো। এই কার্যক্রম ছয়দিন ৭০০টি কেন্দ্রে চলবে। আমাদের দেশে ডায়রিয়া এবং কলেরা বিপজ্জনক রোগ ছিল। মানুষ ভয় পেত কারণ হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন তেমন মৃত্যু নেই। এর পেছনে আমাদের সরকারের অনেক অবদান আছে, আইসিডিডিআর,বির অবদান আছে। তিনি বলেন, চলমান কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করে এসব এলাকার অধিবাসীকে কলেরার টিকা গ্রহণ ও টিকাদান কার্যক্রমে সবার সহযোগীতা প্রয়োজন। আমরা করোনা টিকাদানেও সফল হয়েছি। দেশের টার্গেটকৃত প্রায় সবাইকেই টিকার আওতায় এনেছি। এতে সংক্রমণ এক শতাংশের নিচে চলে এসেছিল। আমাদের মৃত্যু প্রায় শূন্যের কোটায়। কিন্তু এখন আবার সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশে উঠে এসেছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। সম্প্রতি করোনার ফের উর্ধ্বমুখি প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনায় মন্ত্রণালয়ের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিসেও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের সচেতন হতে হবে। সবাইকেই মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আতঙ্কিত না হলেও চিন্তিত। অনুষ্ঠানে ড. ফেরদৌসী কাদরী জানান, বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে মে এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর, বছরে এই দুই বার তীব্র ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এবছর ঢাকায় মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ডাযরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত যেকোনও সময়ের তুলনায় অনেক গুণ বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগীর বসবাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, সবুজবাগ, মোহাম্মদপুর এবং মিরপুর এলাকায়। তিনি বলেন, চলতি বছর কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) শাখার অধীন ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুব দ্রুততার সঙ্গে ইন্টারসেক্টোরাল কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের (আইসিজি) কাছে প্রতিক্রিয়া-ভিত্তিক (রিঅ্যাক্টিভ) কলেরা টিকাদান কর্মসূচির জন্য টিকার সংস্থান করতে আহ্বান জানায়। তিনি বলেন, এর প্রেক্ষিতে আইসিজি প্রায় ৪৭ লাখ ৫০ হাজার মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা প্রদানে সম্মত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহায়তায় আইসিডিডিআর,বি ২৬ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত কলেরার টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করবে। এই কর্মসূচিতে আরও সহায়তা করছে জাতীয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও এমএসএফ। দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভি-র আর্থিক সহায়তায় এই টিকাদান উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে।। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে সব ডায়রিয়া কিন্তু কলেরা না। কলেরা একসময় মৃত্যুর অনেক বড় কারণ ছিল। কিন্তু এখন কলেরা নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের উপকূলীয় এলাকায় ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করেছি। আমরা করোনার মধ্যেই ঢাকার কয়েকটি এলাকায় কলেরার ভ্যাকসিন দিতে শুরু করেছিলাম কিন্তু করোনার কাজের জন্য আমরা আর দিতে পারিনি। প্রসঙ্গত, কমপক্ষে ১৪ দিন অন্তর প্রদেয় দুই ডোজের দক্ষিণ কোরিয়ার ইউবায়োলোজিক্স কোম্পানি লিমিটেডের তৈরি ইউভিকল প্লাস নামের কলেরার টিকা এক বছর থেকে তদূর্ধ্ব বয়সীদেরকে দেওয়া হবে। এ টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। অন্তঃসত্ত্বা নারী ও যারা ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোনো টিকা গ্রহণ করেছে তারা ব্যতীত সবাই এ টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। টিকা নেয়ার ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোনো টিকা নেয়া যাবে না।

Share.