সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত: নজরুল ইসলাম

0

বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাম্প্রতিক আচরণের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাল্পনিক ও গায়েবি মামলা দেওয়ার ঘটনা নিত্য ঘটছে। কিন্তু হামলা-মামলার মাধ্যমে বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। বিএনপি কোনো সময় আপোষ করেনি। এসব বানোয়াট মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে পারবে না। বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে চট্টগ্রামের কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে বিএনপির এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান। সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা এবং নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি কেন্দ্রঘোষিত এই সমাবেশের আয়োজন করে। নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধুমাত্র বিরোধী দলকে দমন করার জন্য আবারো গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন নিপীড়ন করা হচ্ছে। নিজেদের কর্তৃত্ববাদী শাসন পাকাপোক্ত করতেই বিরোধীমতের নেতাকর্মী ও জনগণের ওপর হিংস্র আচরণ অব্যাহত রেখেছে সরকার। বিভিন্ন বাহিনীকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হীন স্বার্থে ব্যবহার করে সরকার তাদেরকে জনগণের মুখোমুখী দাঁড় করাচ্ছে। এদেশে আজ কারো জীবন নিরাপদ নয়। মানুষ আজ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করেছিল সরকার। আবারও নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকার ককটেল বিস্ফোরণের মতো অস্তিত্ববিহীন ঘটনা দেখিয়ে মামলা দিচ্ছে। গত ২২ আগস্ট থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৪৫ জনকে। এসব মামলায় আসামি হিসাবে ৪ হাজার ৪১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আরও ১০ হাজার ৬৬৪ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের পথচলা পলোগ্রাউন্ড থেকে শুরু হয়েছে। গণতন্ত্র যখন ফিরে আসবে, খালেদা জিয়া মুক্ত হবে, তারেক রহমান দেশে ফিরবে এবং গণতান্ত্রিক সরকার ফিরে আসবে তখন এই লড়াই পূর্ণতা পাবে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে এই সরকারের দরকার নাই। ভোটেই যেখানে নেই, সেখানে জনগনের দরকার কেন। সরকারি জমি বন্দক দিয়ে টাকা নিচ্ছে। ব্যাংক দেউলিয়া হচ্ছে। আর কেউ সেকেন্ড হোম করছে, বেগম পাড়ায় বাড়ি বানাচ্ছে, সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে। একটা দলের জেলার একজন নেতা দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করে। প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার ভোট ডাকাতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে নিয়ে জনগনের টাকা লুটপাট করে নিজেরা মোটাতাজা হয়েছে। মাথাপিছু আয় শুধু ক্ষমতাসীনদের বেড়েছে আর দেশের জনগণ ফকির হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরকারি দলের নেতাদের কাছে হাজার হাজার কোটি কালো টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এরা জনগণের সেবক নয় শোষক, এরা লুটেরার দল। এদের থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সকলকে আরও ঐকবদ্ধ হতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। তারা এখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে ছুটছে। সরকার যে বলছে, মধ্যম আয়ের দেশ আর মাথাপিছু আয় বেড়েছে, এটাই তার নমুনা। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। যদি আবারো পাতানো নির্বাচনের নীলনকশা করা হয় তাহলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য জনগণ প্রস্তুত হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ বলেন, খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে জোর করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতো না, ভোট চুরি করতে পারবে না। তাই তাকে গৃহবিবাদ করে রেখেছে। কারণ জিয়া পরিবারের জনপ্রিয়তাকে সরকার ভয় পায়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দাবি যেন আদায় করতে না পারি তার জন্য আজকে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ জানে, বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার কাছে তাদের অন্যায় অত্যাচার টিকবে না। তিনি এত জনপ্রিয় নেত্রী। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এড. আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য হারুন জামান, মাহবুব আলম, নিয়াজ মো. খান, ইকবাল চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, এস এম আবুল ফয়েজ, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আনোয়ার হোসেন লিপু প্রমুখ।

Share.