সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

0

ঢাকা অফিস: ১৮৭০ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা স্থাপনের পর কর্মীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে ৮২ শয্যার একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়। প্রতিষ্ঠার পর হাসপাতালটি বেশ সুনামের সঙ্গে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তবে বর্তমানে সঠিক দেখভাল ও সংস্কারের অভাব এবং জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটি থেকে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রেল কর্মীরা। কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, একসময় হাসপাতালটিতে রোগীদের ভিড় লেগে থাকতো। তবে এখন বর্হির্বিভাগে ১২-১৫ জন আর ভর্তি হয়ে কয়েকজন রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। জনবল সংকট, রোগী ও স্বজনদের খাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকা ও রোগী পরিবহনে সমস্যার কারণে হাসপাতালটিতে রোগীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে জানান রেল কর্মীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে হাসপাতালটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭৪ জন। এরমধ্যে সহকারী সার্জনের পাঁচটি পদের বিপরীতে আছেন একজন, ফার্মাসিস্ট আট জনের বিপরীতে কাজ করছেন তিন জন, সিনিয়র নার্স সাত জনের বিপরীতে একজন ও তিন জন জুনিয়র নার্সের বিপরীতে আছেন মাত্র একজন। এছাড়া, আয়া ও সুইপার পদে ৬৩ জনের বিপরীতে ২৫ জন, খালাসি পাঁচ জনের বিপরীতে একজন, ওয়ার্ডবয় ১৪ জনের বিপরীতে ১২ জন, অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) দুই জনের বিপরীতে একজন, চৌকিদার চার জনের বিপরীতে দুই জন, আয়া ছয় জনের স্থলে চার জন, কুক দুই জনের বিপরীতে একজন কর্মরত আছেন। অন্যদিকে মেট্রন, স্টোর কিপার, ইউডিএ, স্টেনো টাইপিস্ট, স্যানিটারি পরিদর্শক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স চালক, স্ট্রেচার কেরিয়ার (রোগী বহনকারী), অ্যাম্বুলেন্স ক্লিনার, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও ল্যাব অ্যাটেন্ড পদগুলোও শূন্য। হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কারখানার সাবেক শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখানে সাধারণ চিকিৎসা ছাড়া কিছুই মেলে না। নেই কোনও অর্থোপেডিক চিকিৎসক, না আছে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৮২ শয্যার হাসপাতালে রোগীর খাবার বরাদ্দ নেই। তাই রেলওয়ের কারখানার সাধারণ শ্রমিকরা হাসপাতাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অথচ এখানে যে অবকাঠামো রয়েছে, তাতে মেডিক্যাল কলেজ খোলা সম্ভব। অযত্ন আর অবহেলায় অনেক দামি যন্ত্রপাতিও নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালটির বর্হির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন অবসরে যাওয়া রেলওয়ে খালাসি তহুরা বেগম। তিনি বলেন, হাসপাতালে নারীদের জন্য কোনও গাইনি চিকিৎসক নেই। নারীদের সমস্যার বিষয়ে কোনও ধরনের সেবা এখানে পাওয়া য়ায় না। তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য স্থাপিত এ হাসপাতালটি শুধু নামেই রেলওয়ে কারখানার হাসপাতাল। এখানে নেই পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসক। শুধু বিভাগীয় তত্বাবধায়ক ডা. শামীম আরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের প্রধান সহকারী সেগুফতা বাহার বলেন, একসময় হাসপাতালে প্রচুর রোগী আসতো। আর এখন চিকিৎসক নেই, তাই রোগীও আসে না। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় রোগীরা বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালটি সচল করা হলে রেলওয়ে কর্মকর্তাচারীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও সহজেই উন্নত চিকিৎসা পেতো। হাসপাতালের সিস্টার ইনচার্জ মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, সরকারিভাবে ওষুধ সরবারহ কমেছে। এছাড়া হাসপাতালে হাতেগোনা দুই-একটি পরীক্ষা ছাড়া অন্য সব পরীক্ষা (টেস্ট) বাইরে থেকে করতে হয়। যন্ত্রপাতি থাকলেও জনবল সংকটের কারণে রোগীদের বাইরে থেকে টেস্ট করাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালের বিভাগীয় মেডিক্যাল কর্মকর্তা (ডিএমও) ডা. শামীম আরা বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ যেমন পুলিশ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে, তেমনি রেলওয়ের হাসপাতালটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দুই বছর ধরে একাই চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবাধয়ক (ডিএস) ভারপ্রাপ্ত জয়দুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছে ভালো সেবা দেওয়ার জন্য। তবে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটি জনবল সংকটে ভুগচে। হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, সেবিকা ও অন্য সাপোর্ট স্টাফ। ওষুধের সরবরাহও অপ্রতুল। হাসপাতালটি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া হলে সংকট কাটতো বলে জানান তিনি।

Share.