স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে : কাদের

0

ঢাকা অফিস: স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের (ডিআরইউ) মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আজ শুক্রবার নিজের বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান অত্যন্ত কঠোর ও স্পষ্ট উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এর আগে ক্যাসিনো-বিরোধী শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছে সরকার। এসব অনিয়ম সরকারকে কেউ দেখিয়ে দেয়নি। সরকার নিজস্ব মেকানিজমে তা উদঘাটন করে স্বপ্রণোদিত হয়েই অভিযান শুরু করেছে। সম্প্রতি ধর্ষণসহ নারীর প্রতি অবমাননা এবং যেকোনো অনিয়ম, দুর্নীতি, সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে শেখ হাসিনা সরকার।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের কাছে অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় নেই। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখেছে সরকার। দলীয় পরিচয় কারো আত্মরক্ষার ঢাল হতে পারেনি।’ ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বিএনপির আমলে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার হয়নি, বরং বিচারের নামে হত্যাকারীদের রক্ষা করা হয়েছে। বিএনপির মুখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা ভুতের মুখে রাম-নাম ধ্বনির মতোই।’ এ সময় ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘গণমাধ্যম আর মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতার কথা তারা বলছে? খুলনায় সাংবাদিক মানিক সাহাকে কারা হত্যা করেছিল? হুমায়ুন কবিরের হত্যাকাণ্ডের কথা ভুলে গেছেন? শাসছুর রহমান, দীপঙ্কর চক্রবর্তীসহ অসংখ্য সাংবাদিককে কারা হত্যা করেছিল? ২০০১ সালে বিএনপির ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম তিন মাসে ৫০ জন সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হয়েছে।’আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘এ দেশের রাজনীতিতে দুটি ধারা প্রবহমান। এক দিকে একাত্তরের অবিনাশী চেতনা, অপরদিকে সাতচল্লিশের চেতনা। একদিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন, অপরদিকে সাম্প্রদায়িকতায় ভর করে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা। একদিকে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান মনস্ক প্রজন্ম তৈরির মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যয়, অপরদিকে মিথ্যাচার, নেতিবাচকতা আর পশ্চাৎপদতার সংস্কৃতি।’ বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং চাপমুক্ত হয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় জনগণ দেখেছে, আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায় এসেছে এবং শাস্তি ভোগ করছে। সরকার হস্তক্ষেপ করলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। এ থেকে প্রমাণ হয়, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই কাজ করছে। বিএনপি দলের পক্ষে রায় এলে বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানায় আর বিপক্ষে রায় গেলে বলে সরকার হস্তক্ষেপ করছে। এমন দ্বিচারিতা বিএনপির সবসময়ের রাজনৈতিক সঙ্গী।’ দেশের নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আওতায় থেকে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। তারা ফলো করবে নিজস্ব বিধিবিধান, অন্য দেশে কী হলো তা নয়। দেশে অবস্থা এমন হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশনকে যেন বিএনপিকে জয়লাভের নিশ্চয়তা দিতে হবে, বিএনপিকে জয়ী করাই নির্বাচন কমিশনের যেন মূল দায়িত্ব। বিএনপি যেকোনো নির্বাচনে পরাজিত হলেই দায় চাপায় সরকার, নির্বাচন কমিশন আর নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর। আর জয়ী হলে বলে, সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আরো বেশি ভোটে জিততে পারত।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন ও আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি তাদের রাজনীতিকে নালিশি ও প্রেস ব্রিফিংয়ের রাজনীতিতে পরিণত করেছে।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারলেই কেবল নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে।’ সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, সরকার জনগণের মনের ভাষা বোঝে না। আমি বলতে চাই, জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের মনের ভাষা, চোখের ভাষা বুঝতে পারেন বলেই এত জনপ্রিয়। আর বিএনপি জনগণের ভাষা বুঝতে পারা তো দূরের কথা, তাদের কর্মীদের মনের কথাই বোঝে না।’ ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে বিএনপি কোনো বিক্ষোভই দেখাতে পারেনি। তারা নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনে ব্যর্থ। তাদের রাজনীতি ঘরে বসার রাজনীতি। আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিএনপির নেতারা ঘরে বসে থাকেন, কর্মীদের পাশে দাঁড়ান না। এজন্য কোনো কর্মী আন্দোলনে সাড়া দেয় না। কিন্তু আমরা অনেক নির্যাতন সহ্য করে রাজনীতি করেছি।’এ সময় পদ্মাসেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পায়রা সমুদ্র বন্দর, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণসহ সরকারের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের।

Share.