হাট বাজারগুলোতে রুপচাঁদা মাছ বলে নিষিদ্ধ পিরানহা বিক্রি

0
বাংলাদেশ থেকে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশের জলজ পরিবেশের সঙ্গে পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ সংগতিপূর্ণ নয়। এ মাছ গুলো রাক্ষুস স্বভাবের। অন্য মাছ ও জলজ প্রাণীদের খেয়ে ফেলে। দেশীয় প্রজাতির মাছ তথা জীববৈচির্ত্র্যরে জন্য এগুলো হুমকি স্বরূপ। এ কারণে সরকার ও মৎস্য অধিদপ্তর আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছের পোনা উৎপাদন, চাষ, বংশ বৃদ্ধিকরণ,বাজারে ক্রয়- বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। গত ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের জুন মাসে আফ্রিকান মাগুরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানাযায়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ভালুকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চলের ডোবা বা পুকুরে পিরানহার উৎপাদন ও চাষ করা হচ্ছে। আর আফ্রিকান মাগুরের চাষ হচ্ছে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ও নারায়ণগঞ্জের অব্যবহৃত পরিত্যক্ত ডোবা ও নালায়। বিক্রির উপযুক্ত হলে ট্রাক যোগে এসব মাছ দেশের বিভিন্ন মাছের আড়ত ও বাজারে পাঠানো হয়। এ রাক্ষুসী পিরানহা বাজার ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি ও আফ্রিকান মাগুর বাজারভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন বাজার থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত অঞ্চলের বাজার গুলোতে কিছু অসাধু বিক্রেতা এসব মাছ বিক্রি করছেন। আর এই মাছে ক্রেতারা হচ্ছেন সাধারণ ও নিম্ব  মধ্যবিত্তরা। দেশি বা থাই রুপচাঁদা অথবা ‘সামুদ্রিক চান্দা’ নামে পিরানহা আর দেশি মাগুর বলে ছোট আকারের আফ্রিকান মাগুর বিক্রি করতে দেখা গেছে বিভিন্ন হাট বাজারে। নবীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিরানহা মাছের সরবরাহ প্রতিটি বাজারে কম বেশ বিক্রয় হচ্ছে। পিরানহা মাছের প্রতিসাদক সম্পর্কে সাধারন মানুষ কিছুই জানেন না। ঢাকা- সিলেট মহা সড়কের আউশকান্দি- হীরাগঞ্জ বাজার, বাংলা বাজার, সৈয়দপুর বাজার, ইনাতগঞ্জ, শেরপুর, নবীগঞ্জ সহ আরো অনেকে হাট বাজারে মাছ বিক্রেতারা দেদারছে বিক্রয় করে আসছেন। মাছ কিনতে আসা মুদি ব্যবসায়ী মখতব মিয়া, বৃক্ষচাষী আব্দুল গনি (ওসমানী), ডাক্তার পলাশ চৌধুরী, ওয়ার্কসপ ইঞ্জিনিয়ার হুমায়ূন, ব্যবসয়ী রাজু আহমদ, হাজী চাঁদ মিয়া, আল আমিন, ক্বারী আব্দুল কাইয়ুম, শ্রমিক নেতা লিটন মিয়া সহ আরো অনেকেই বিভিন্ন হাট বাজার থেকে রুপচাঁদা মাছ কম দাম হওয়ায় ক্রয় করে নিয়ে আসছেন। এই মাছের কেজি কত জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতারা বলেন, ২০০ টাকা কেজি। এতে কেউ ১৭০, ১৮০ ও ১৫০ টাকায় মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ খবর পেয়ে সাংবাদিকরা বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের যখন বলা হলো এটা রুপচাঁদা মাছ নয়। এটা হলো রাক্ষুসে পিরানহা মাছ। এ কথা শুনে যারা মাছ ক্রয় করেছিলেন তারা এসব কথায় কান না দিয়ে বাড়ির দিকে দ্রুত চলে যান। এ নিয়ে কয়েকজন মাছ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই এলাকায় কয়েক মাস ধরে প্রায়ই আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছ আমরা বিক্রিয় করছি। দাম কম বলে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব মাছ কিনেছেন। কোন আড়ৎ থেকে এসব মাছ নিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে বলেন শেরপুর আড়ৎ থেকে তারা এই মাছগুলো আনেন। পিরানহা মাছে খেলে বা বিক্রয় করলে কি হয় তা তাদের জানা নেই! এ মাছ গুলো রুপচাঁদা মাছের মতো হলেও এই মাছের নাম হলো পিরানহা। সরকার পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুরের উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছেন। দেশের বিভিন্ন বাজারে এই নিষিদ্ধ মাছ প্রশ্যেই বিক্রি হচ্ছে। মাছ বাজারের কয়েকজন বিক্রেতার সাথে আলাপকালে তারা জানান, এই মাছ বিক্রয়ে যে নিষেধ, তা আমরা জানিনা। তবে, আশপাশের মাছ বিক্রেতাসহ আরো অনেকেই বলেন, প্রায় দিনই বিভিন্ন হাট বাজারে এই পিরানহা মাছ বিক্রিয় হচ্ছে। কম দাম হওয়ায় ও রুপচাঁদা মাছ মনে করে এই পিরানহান মাছ বাজার থেকে ক্রয় করে। ক্রেতাদের কাছে মিথ্যা কথা বলে কেন বিক্রয় করছেন বললে? জবাবে বিক্রেতা বলেন, এটা যে ক্ষতিকর তা আমার জানা নেই। আজ জানলাম আপনার কাছ থেকে। আমরা আর বিক্রয় করবনা। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, বিষয়টি আমি দেখতেছি। এবং মৎস্য কর্মকর্তাকে আপনি বিষয়টি অবগত করুন, আমিও বিষয়টি দেখছি। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আছাদ উল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই মাছ অনেক ক্ষতিকর তা অনেকেই জানেনা। যদি কোন খবর পাই যে, পিরানহা মাছ কোন বাজারে বা আড়তে বিক্রয় হচ্ছে তাহলে আমরা তাৎক্ষনিক প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করব।
Share.