লাইফস্টাইল ডেস্ক: রাজধানী ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীগুলোর মধ্যে ৩০ শতাংশ হাঁপানি রোগী। প্রতিবছরই এই সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার (৫ মে) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি দশ বছর অন্তর বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন শ্বাসতন্ত্রের অসুখ বিষয়ে জরিপ চালায়। জরিপে দেখা গেছে, ১৯৯৯ সালে দেশে হাঁপানি রোগী ছিল ৭০ লাখ। এর ১০ বছর পর রোগীর সংখ্যা বিশ লাখ বেড়ে হয় ৯০ লাখ। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের জন্য পরবর্তী জরিপটি পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তবে শহরাঞ্চলে হাঁপানি বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাঁপানির লক্ষণ : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগ গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফর অ্যাজমা’র বাংলাদেশ সমন্বয়ক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলছেন, হাঁপানির প্রাথমিক লক্ষণ চারটি।মাঝে মধ্যেই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিশ্বাসের সঙ্গে সাঁ সাঁ শব্দ শুনতে পাওয়া, শুকনো কাশি, কখনো এই কাশি একটানা দীর্ঘক্ষণ চলা, বুকে চাপ অনুভব করা এবং অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়ার মতো কোনো লক্ষণ যদি কারো থাকে তাহলে সে সম্ভবত হাঁপানিতে আক্রান্ত। কারো এমন সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত তার।ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলছেন, হাঁপানি বংশগতভাবে কিংবা পরিবেশগত কারণেও হয়ে থাকে। সম্প্রতি সময়ে পরিবেশগত কারণই শহরাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক যে কারোই হতে পারে হাঁপানি।
শহরে হাঁপানি বেশি হওয়ার কারণ : শহর অঞ্চল, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং যেসব অঞ্চলে নগরায়নের প্রক্রিয়া চলছে সেসব এলাকায় হাঁপানি বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অ্যাজমা ইউকে বলছে. বায়ু দূষণের জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে হাঁপানি।ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর এ বিষয়ে বলছেন, শহরে পরিবেশ বেশি মাত্রায় দূষণ থাকে। ধুলোবালি, ধোঁয়া ইত্যাদির জন্য পরিবেশ দূষণ হওয়ায় ফুসফুসের রোগটি দ্রুত সময়ে বিস্তার করে। এক্ষেত্রে যাদের হাঁপানি রোগ রয়েছে তারা তুলনামূলক একটু বেশি ভুগে থাকেন। আবার যাদের সমস্যা কম তাদের হাঁপানি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।শহরাঞ্চলে হাঁপানি বৃদ্ধির মূল কারণ ঘনবসতি। শহরে একসঙ্গে অনেক মানুষ বসবাস করেন। ফলে ঘরের ভেতরের পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে ও অস্বাস্থ্যকর হয়। ঘরের আসবাবে জমে থাকা ধুলো এবং ধুলোয় ‘ডাস্ট মাইট’ নামক এক প্রকার কীট বেশি তৈরি হয়। যা কিনা হাঁপানি অনেক মাত্রায় বৃদ্ধি করে।শহরে রান্নার ধোঁয়া বের হওয়ার প্রক্রিয়া না থাকায় নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়। গ্রামে পরিবেশ খোলামেলা হওয়ায় গ্রামে এই সমস্যা তুলনামূলক কম হয়। এছাড়া শহরে টাটকা খাবারের পরিবর্তে কৃত্রিম খাবার খাওয়া হয়। শারীরিক ব্যায়াম ও পরিশ্রমও কম হয়। বিশেষ করে বলা যেতে পারে শিশুদের ক্ষেত্রে দূষণের পাশাপাশি তাদের খেলাধুলার জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই। ঘরবন্দি জীবন ফুসফুসের সবল বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে তোলে শিশুদের। যে কারণে দুর্বল ফুসফুসেও হাঁপানির সম্ভাবনা থাকে।