ঢাকা অফিস: নিজেদের আশপাশে আন্দোলন ভণ্ডুল করার লোক দেখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সামনে বিএনপি আন্দোলন আছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আন্দোলন করার লোকের কোনো অভাব নেই। আন্দোলনকে ভণ্ডুল করতে অনেক লোকের দরকার নেই; সেই লোকগুলো আমাদের আশপাশে আছে।’ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের উদ্যোগে ‘ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে’ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের চক্রান্তে না পড়ে ঘরে বসে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘সরকারের চক্রান্তের উপাদানে যদি আমরা (বিএনপি ও সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দল) না পড়ি, তাহলে আমরা ঘরে বসে থাকলেও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় যেতে পারবেন না এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনও করতে পারবেন না।’ বিএনপি আন্দোলন করবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই- এমন মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, ‘আন্দোলন করার লোকের কোনো অভাব নেই। আন্দোলনকে ভন্ডুল করতে অনেক লোকের দরকার নেই; সেই লোকগুলো আমাদের আশপাশে আছে। সেই লোকদের গোপনে, আড়ালে কথাবার্তা চলছে কিনা। কার কাছে হাসিনা কথা দিয়েছিলেন ৬০-৭০টা আসন দেবেন? সেই লোকটা কে?’ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন নিয়ে সরকার ভীত না বলেও মনে করেন গয়েশ্বর। বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আন্দোলনকে দমন করতে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী রয়েছে। শেখ হাসিনা বেকায়দায় আছেন সারা বিশ্বে তার প্রতারণা, দুর্নীতি, তার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র পরিচালনা, গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা নিয়ে। নিরপেক্ষ সরকারের পাশাপাশি সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার দাবি জানান বিএনপির এই নেতা। গয়েশ্বর বলেন, একজন অবিশ্বাসী লোককে কেন আমরা বিশ্বাস করলাম। কেন খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে নির্বাচনে গেলাম। ৭ দফা জাহান্নামে যাক। আমাদের একটাই দফা, খালেদা জিয়ার মুক্তি। আমরা কেন সেটা বাস্তবায়ন না করে সংসদে গেলাম?’ আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় দেখে একটা আর তারা বলে আরেকটা। শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন রেখে গয়েশ্বর বলেন, দুর্নীতির পরিমাণ কেমন হলে একটা বালিশের দাম ৭ হাজার টাকা হয়। নিউ মার্কেটের সংঘর্ষ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নিউ মার্কেটের ঘটনায় দুই জন নিহত হয়েছে। সন্তান মারা গেছে, বাবা বলছেন কার কাছে বিচার চাইবো। কতোটা বিচারহীনতা ও আস্থাহীনতা তৈরি হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গয়েশ্বর আরও বলেন, ডা. জোবায়দা রহমান এখন বেগম জিয়ার চিকিৎসার বিষয় দেখাশোনা করছেন। তিনি চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করছেন। যেসব কাজ করলে হার্টের রোগ হবে না-তা নিয়ে জোবাইদা গবেষণা করছেন। তিনি একান্তই রাজনীতির বাইরে। তারা স্বাধীনতার আগ থেকেই সম্পদশালী ও ক্ষমতাবান। ১৯৫৫ সালের পরে তারা ঢাকা বা সিলেটে কোনো জমি কিনেছেন এমন রেকর্ড নাই। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা দেওয়া শুধুমাত্র হয়রানির জন্য; আর কিছু নয়। শেখ হাসিনার কাছে মামলা দিতে কোনো কারণ লাগে না বলেও দাবি করেন তিনি। গয়েশ্বর বলেন, কথায় আছে আকাশের যতো তারা, পুলিশের কাছে তার চেয়ে অনেক বেশি ধারা। তারা নাকি বাতাসের গলায়ও রশি বাঁধতে পারে। তাই তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা কর্মীদের হয়রানি করছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা আপনাকে (শেখ হাসিনা) বিশ্বাস করেছিলাম। আপনি বললেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা। আপনারা আমার সঙ্গে আসেন; আলোচনা করে দেশে কীভাবে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়।’ আমরা বিশ্বাস করে আপনার অফিসে গেলাম। আপনি এমনভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন যে দিনের ভোট রাতে করলেন।’ আহসান হাবিবের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি লিংকনকে বলব, যারা শেখ হাসিনার কথা বিশ্বাস করে, তারা মানুষ না। গয়েশ্বর বলেন, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র কি যারা প্রাসাদের মধ্যে থাকে তাদের মধ্যেই হয়? প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমরা কেউ অংশগ্রহণ করছি কি না?’ বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আন্দোলন করলাম দিনের বেলায়। আর রাতের বেলায় তার (সরকার প্রধান) সাথে বৈঠক করলাম, আসন ভাগাভাগি করলাম। আমার মামলাটা একটু দেখবেন-এসব কথাবার্তা যদি চালাচালি করেন রাতের অন্ধকারে বসে, তাহলে সাধারণ নেতা-কর্মী বুঝবে না। সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সহ সভাপতি শাহাদাত হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ প্রমুখ।
নিজেদের আশপাশে আন্দোলন ভণ্ডুলের লোক দেখছেন গয়েশ্বর
0
Share.