ঢাকা অফিস: অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে আগামী বুধবার থেকে দেশের সব সরকারী- বেসরকারীখাতের ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে আসলে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের পুঁজিবাজারে যে ধস দেখা দিয়েছে তা কাটাতে সরকারের উদ্যোগ রয়েছে। বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বেই করোনা একটি বড় সমস্যা। এই ভাইরাসের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে সরে পড়ছেন। এতে করে ১০ টাকার শেয়ার হয়ে গেছে ৫ টাকা। এটা বড় বিপযর্য। আর তাই বিনিয়োকারীদের উদ্দেশ্যে বলবো, আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করবেন না। বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষ করে চীন, তাইওয়ান, হংকং এবং থাইল্যান্ড থেকে করোনা প্রায় দূর হয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকেও দ্রুত এটা চলে যাবে। এছাড়া বুধবার থেকে ব্যাংকগুলো শেয়ার কিনবে, ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকগুলো হলো প্রাথমিক উৎস। তারা সবাই আশস্ত করেছেন, তারা বিনিয়োগ করবেন। পুঁজিবাজারের কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হউন। এছাড়া এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। সবার সহযোগীতায় পুঁজিবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভাইরাস যখন আসে নাই, তখন কিন্তু মার্কেট ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছিল। হঠাৎ করে চিনে যখন ভাইরাস হানা দিল, সাথে সাথে মার্কেট কমতে শুরু করেছে। এই সময়ে সবাইকে যে জোর করে রাখব, সেই ব্যবস্থা নাই। আমাদের খারাপ লাগে। জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে আমাদের তো কিছু দায়িত্ব আছে। পুঁজিবাজার যেন একটি জায়গায় আসে, এখন স্থিতিশীল হলে তো লাভ নাই। পুঁজিবাজারকে আগে উঠাইতে হবে। উঠিয়ে স্থিতিশীল করতে হবে। এ সময় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, দেশের পুঁজিবাজার উঠতেছিল, হঠাৎ করে করোনা ভাইরাস আসার পর ভয় পেয়ে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এখনই ওই ২০০ কোটি টাকা যেটা দেয়া হয়েছে সেখানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মতো আছে। এখনই ওই টাকার সৎ ব্যবহার করা উচিত। প্রত্যেকটা ব্যাংক রাজি হয়ে গেছি যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে শর্তগুলো দিয়েছে, ওই শর্ত সাপেক্ষেই বুধবার থেকে আমরা শেয়ার কেনার জন্য বসব। তিনি আরও বলেন, এখানে প্রায় ৫০টার মতো ব্যাংক আছে। সবাই ২০০ কোটি টাকা করে একবারে কিনবে না। ক্রমান্বয়ে কিনবে। এটা মনিটরিং করা হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। হঠাৎ করে একজন ২০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে এটা হবে না। যখন যা প্রয়োজন একটা বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য। ৫০০ বা ৬০০ কোটি টাকার বেশি যেন শেয়ার কেনা না হয়। কারণ হঠাৎ করে ১০০০ কোটি টাকার শেয়ার কেনা হলো, পরের দিন ধ্বস হয়ে গেল, এটা যেন না হয়। এ সময় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, পুঁজিবাজারে এখন যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, আস্তে আস্তে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এটাই ছিল সভার মূল বিষয়। আমরা সরকারের প্রস্তাবের সঙ্গে মোটামুটিভাবে একমত। দুই-একটা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বসে বুঝে নিতে।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারী ৬ ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে। গত রবিবার থেকে বিনিয়োগ শুরু করবে আরও দুই ব্যাংক। এছাড়া বুধবার থেকে বাকি ব্যাংকগুলো শেয়ার কিনবে। এছাড়া বিনিয়োগ শুরু করতে যাওয়া আরও ৬ ব্যাংক হলো- সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইউসিবিএল ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। সিটি ব্যাংক ছাড়া সবগুলো ব্যাংক নিজস্ব তহবিল হতে বিনিয়োগ শুরু করেছে। সিটি ব্যাংক পূর্বের নেয়া ৫০ কোটি টাকা বিশেষ তহবিলে রূপান্তর করেছে। এ সপ্তাহে ব্যাংকটির বিনিয়োগ আরও বাড়াবে। রবিবার থেকে বিনিয়োগে আসছে জনতা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক। জনতা ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ তহবিলের ২০০ কোটি টাকা গ্রহণ করেছে। জনতা ব্যাংকই প্রথম ব্যাংক যেটি বিশেষ তহবিল হতে পুরো অর্থ গ্রহণ করল। এছাড়া, গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংক নিজস্ব তহবিল হতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এছাড়া চলতি সপ্তাহে বিনিয়োগে সক্রিয় হচ্ছে আরও ৫ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- এনসিসি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এনআরবি ব্যাংক। চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকে বুধবারের মধ্যে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সভা নির্ধারিত রয়েছে। এসব সভায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদিত হবে।