ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ‘উগ্র’ বেনেট

0

ডেস্ক রিপোর্ট: ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেট। এর আগে তিনি দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর কমান্ডো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসা এই নেতা এ বিষয়ে নিজেকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চাইতেও কট্টর হিসেবে দাবি করেন। তার মতে, ইসরায়েলের উচিত অধিকৃত পশ্চিমতীরের অধিকাংশ দখল করে নেওয়া।তিনি নিজে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী না হলেও পশ্চিমতীরে ইহুদিদের এজেন্ডাকে পুরো সমর্থন দিয়ে আসছেন। ফিলিস্তিনিদের বৃহৎ আকারে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার কথা বললেও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা স্বীকার করতে নারাজ নাফতালি বেনেট।যদিও তার জোটসঙ্গী লেখক ও গীতিকার ইয়ার লাপিদ ইসরায়েলি ধর্মনিরপেক্ষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির হয়ে কথা বলেন। ৫৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ সাবেক সংবাদ উপস্থাপক, থ্রিলার লেখক ও প্রচুর পপ গানের রচয়িতাও।নাফতালি বেনেটের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার উচ্চাভিলাষ আগে থেকেই ছিল। তবে যেভাবে তা পূরণ হতে যাচ্ছে, তা হয়তো তিনি নিজেও ভাবেননি। তার কট্টরপন্থী দল ইয়ামিনা গত সাধারণ নির্বাচনেও জিতেছে মাত্র ছয়টি আসনে। কিন্তু অল্প ওই আসনই এখন হয়ে উঠেছে তার তুরুপের তাস।
সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে বেনেটের দলের অবস্থান যৌথভাবে পঞ্চম। কিন্তু তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছেন কিংমেকার। কারণ সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রধান দুটি পক্ষের কাছে পর্যাপ্ত আসন নেই। তাই জোট গঠনে বেনেট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ— দুজনেই বেনেটকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেন, সঙ্গে ছিল ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব। শেষ পর্যন্ত লাপিদের সঙ্গে থাকতেই মনস্থির করেছেন বেনেট।
শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী লাপিদের জোটের প্রধান শরিক নাফতালি বেনেট প্রথমে দুই বছরের জন্য জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। এরপর পালাবদল হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিদ।৪৯ বছর বয়সী নাফতালি বেনেটকে এক সময় নেতানিয়াহুর শিষ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেছেন।কিন্তু মতপার্থক্যের কারণে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি ছেড়ে বেনেট যোগ দেন ধর্মীয় কট্টরপন্থী দল জিয়ুশ হোম পার্টিতে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলীয় সাফল্যে ভূমিকা রেখে পার্লামেন্ট সদস্য হন তিনি।এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রতিটি জোট সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন বেনেট। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাদের ডানপন্থী জোট কোনো আসন জিততে ব্যর্থ হয়। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে ইয়ামিনা দলের প্রধান হিসেবে পার্লামেন্টে যোগ দেন তিনি।অতি কট্টরপন্থী হিসেবে চিহ্নিত বেনেট ইসরায়েলকে একটি ইহুদি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতেই বেশি উদ্যোগী। তিনি মনে করেন, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি— যা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল দখল করে রেখেছে— ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে ইসরায়েলই ওই ভূখণ্ডের দাবিদার।দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলে বসতি নির্মাণ কার্যক্রমে সমর্থন দিয়ে আসছেন। যদিও তিনি বলেছেন গাজার ওপর ইসরায়েলের কোনো দাবি নেই।মধ্যপ্রাচ্য সংকটের দুই রাষ্ট্র সমাধান মানেন না ইয়ামিনা দলের প্রধান। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে তিনি অতি কঠোর ভাষায় নাকচ করে থাকেন।ফিলিস্তিনি গেরিলাদের বিরুদ্ধেও অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণের পক্ষে নাফতালি বেনেট। তিনি গেরিলাদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করেন। ২০১৮ সালে সংঘাত বন্ধে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তিরও বিরোধিতা করেছিলেন তিনি।বেনেট পুরোপুরি ইহুদি সংস্কৃতি মেনে চলেন এবং ইহুদিদের ধর্মীয় টুপি কিপ্পা ব্যবহার করেন। বিবিসি লিখেছে, রাজনীতিতে নামার আগে সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা এবং ব্যবসায়ীক সমৃদ্ধি বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বেনেটকে।২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমি দিনে ১৭টা স্টেক খাই না, ব্যক্তিগত জেট বা ইয়টেও চড়ি না। সহজ কথায়, এটাই আমাকে নিজের মর্জিমাফিক চলার স্বাধীনতা দিয়েছে।তার ডানপন্থী সমর্থকেরা নেতানিয়াহুর অনেক কার্যক্রমকেই সমর্থন ও লালন করছেন। বেনেট সবকিছু নতুন করে শুরুর কথা বললেও কখনোই বলেননি যে নেতানিয়াহুকে অবশ্যই একেবারে সরে যেতে হবে। তবে ধর্মীয় অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় তাকে বেশ উদার দেখা গেছে। আন্তধর্মীয় ও আন্তরাষ্ট্রীয় বিয়েতে তার আপত্তি নেই। এক্ষেত্রে ইয়ার লাপিদের সঙ্গে তার ব্যাপক মিল।নির্বাচন পরবর্তী ভাষণে তিনি ঐক্য ও সংশোধনের ডাক দিয়েছেন। লাপিদও একই কথা বলছেন।করোনায় বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে সচল করা এবং শিক্ষা ও ব্যবসায়িক সংস্কার বাস্তবায়নে জোর দিতে চান নাফতালি বেনেট।

Share.