এডিপিতে সরকারি বরাদ্দ কমছে ২৫ শতাংশ

0

ঢাকা অফিস:  বন্ধ করা হচ্ছে না করোনার কারণে স্বল্প-অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের তহবিল বিতরণ। বরং বাৎসরিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতাভুক্ত বরাদ্দের ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি অর্থবিভাগ থেকে জারি করা উপ-সচিব তনিমা তাসনিম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের জানানো হয়েছে। সেই চিঠি থেকে জানা যায়, করোনা মহামারির মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোতে কৃচ্ছতা সাধনের জন্য এডিপিতে সরকারি বরাদ্দ কমানোর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থবিভাগের বাজেট শাখা থেকে জারি করা ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পরিচালিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নিম্ন-অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোকে একই বরাদ্দ দিয়ে এডিপি তহবিলে সরকারি অংশ থেকে কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে, সরকারি এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পগুলোর সময় বাড়ানোসহ কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই নির্দেশনা নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলো অর্থ ব্যয় করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে। এডিপিভুক্ত যে সব প্রকল্পগুলো ২০২০-২১ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা, এ নির্দেশিকা শুধু তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’ এক্ষেত্রে আইএমএফের সাবেক উপদেষ্টা ড. রেজা কিবরিয়ার পরামর্শ, ‘কোভিড-১৯’ মহামারি আগামী দেড় বছর অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে সরকারের পদক্ষেপগুলো আগামী দুই বছর অব্যাহত রাখা উচিত। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমন প্রকল্প তৈরি এবং বিদ্যমান প্রকল্প বাস্তবায়ন চালু রাখার বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে মানুষের রুটি-রুজি সংগ্রহে কোনো সমস্যা না হয়।’ করোনার কারণে গত জুলাইতে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার কারণে সরকার নিম্ন-অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে স্বল্প-অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোকে প্রকল্প সহায়তা বা বিদেশি ঋণ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কাস্টম শুল্ক এবং ভ্যাট পরিশোধের কারণে এ জাতীয় সহায়তা ব্যবহার করতে পারছে না। অর্থবিভাগ কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রকল্পের এডিপিতে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ বন্ধের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করে ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চলমান সমস্ত প্রকল্পকে উচ্চ, মাঝারি ও নিম্ন-অগ্রাধিকার তিনটি গ্রুপ করে একটি তালিকা অর্থবিভাগে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (আরএইচডি) চলমান ১৯৬ প্রকল্পের মধ্যে মন্ত্রণালয় ৫৭টিকে নিম্ন-অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে এবং অর্থবিভাগ এ প্রকল্পগুলোতে সরকারের অর্থায়ন বন্ধ করেছে। এ ৫৭ প্রকল্পই আরএইচডি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছিল। আরএইচডি সব প্রকল্পের জন্য ৪,৮৮৫ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ বন্ধের সুপারিশ করেছে। গত জুলাই মাসে অর্থবিভাগের বাজেট উইং-২ থেকে প্রকল্প ভিত্তিতে এডিপি তহবিল বরাদ্দের বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করে। যোগাযোগ করা হলে বাজেট উইং-২ এর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ছাড়াও এলজিআরডি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কম-অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুপারিশ পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় কয়েকটি নিম্ন-অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের উন্নয়নের প্রস্তাব করেছে, আবার কেউ কেউ তহবিল কাটার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা এখন প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করছি। সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে খুব সম্ভবত এটি পরিবর্তন হবে না।’

Share.