গরু বাঁচাতে সোনার দামে খড় কিনছে কৃষক

0

ঢাকা অফিস: গরু মহিষের প্রধান খাদ্য খড়। হেলাফেলার খড় এবার বিক্রি হচ্ছে সোনার দামে। কুড়িগ্রামে প্রতি কেজি খড়ের দাম পড়ছে পঞ্চাশ টাকা। প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। একশ আঁটি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়। মাড়াই করা খড়ের দাম আরেকটু বেশি। কেজি প্রতি ধরলে পঞ্চাশের ওপরে দাম। এছাড়া ধানের কুঁড়ো বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি। তারপরেও সচরাচর মিলছে না এসব গো-খাদ্য। গবাদি পুশু বাঁচাতে বিলের কচুরিপানা, কচি কলাগাছ, বাঁশের পাতা, কাঁঠালের পাতার ওপর ভরসা করছে কৃষকেরা। এমন অবস্থার কারণ হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যাকে দায়ী করছে ভুক্তভোগীরা।চলতি বছরের জুলাই থেকে তীব্র গো- খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে কুড়িগ্রামে। জুন থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পাঁচ দফার বন্যায় জেলার কৃষি জমির পাশাপাশি চারণ ভূমিসহ গৃহস্থের বাড়িতে রাখা খড় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রথম দফার বন্যা থেকেই গো-খাদ্যের সংকট চলছে কুড়িগ্রামে। এ সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে এখন। জেলায় নেই ঘাষ-খড়ের যোগান। বিভিন্ন জেলা থেকে কিছু খর আমদানি করলেও সেগুলোর দাম আকাশ ছোঁয়া। একদিকে নিজেদের খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের অপর দিকে চড়া দামের গো-খাদ্য কেনা স্বপ্ন মাত্র। বন্যার আগে জেলায় একশ খড়ের আটির দাম ছিল দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা। এখন ৮-৯ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। তাও কিনতে হচ্ছে উপজেলার সদর হাট থেকে। গ্রামগঞ্জে মিলছে না খড়। অপরদিকে দাম বেড়েছে সব ধরনের পশু খাদ্যের। খাদ্য সংকটে থাকা গবাদি পশু মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কমে যাচ্ছে ওজন এবং দুধের যোগান। ফলে দাম কমেছে এসব গবাদি পশুর। ক্ষতিতে পড়েছে পশু পালনকারীরা। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের গৃহস্থ শহিদ মিয়া জানান, ইরি-বোরো মৌসুমে বৃষ্টি থাকায় খড় সব পচে গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় শুকনো খড় মজুদ করতে পারেন নাই। এখন পাঁচটি গরুর খাদ্য সংগ্রহ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাকে। এলাকায় খড়ের যোগান নেই। তাই কচি কলা গাছ কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। সুবল পাড় এলাকার বাদল শাহ ও আব্দুল মজিদ বলেন, খড়ের অভাবে গরুকে বিলের কচুরিপানা খাওয়াতে হচ্ছে। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের আব্দুল কাদের ও জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, কচুরিপানা ছাড়া আর কিছু খেতে দিতে পারছে না গরুকে। যদিও কচুরিপানা গরু খেতে চায় না তবুও বেশি দামের খড় কেনা তাদের  পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। একই ইউনিয়নের হারুন মিয়া জানায় খাদ্যের অভাবে গরু-ছাগল রোগা হয়ে যাচ্ছে। ফলে গরু প্রতি দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পূর্ব কেদার গ্রামের আল-মামুন বলেন, গো-খাদ্যের মহাসংকট চলছে। প্রতি আটি খড়ের দাম ২০ টাকা। কেজিতে ধরলে পঞ্চাশ টাকা পড়ে যায়। তার পরেও নির্দিষ্ট হাট ছাড়া সচরাচর পাওয়া যায় না। যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোবারক আলী জানান, খাদ্যের অভাবে গরু- ছাগলকে বাঁশ এবং কাঁঠাল পাতা দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। রহিমা বেগম জানান, খাদ্যের অভাবে তার গাভীর দুধ দেয়ার পরিমাণ একেবারে কমে গেছে। দুধ বিক্রি করে তার সংসার চলতো এখন অভাব অনটন চলছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নের করিম মিয়া বলেন, চরাঞ্চলের সব চারণভূমি বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঘাষের সংকট দেখা দিয়েছে। ধানের কুঁড়ো, খুদের ভাত দিয়ে তার চারটি মহিষের জীবন চলছে। যাত্রাপুর হাটের খড় বিক্রেতা মজিদ মিয়া জানান, এই সংকটে দিনাজপুর,নওগা, রংপুর, রাজশাহী,পঞ্চগড় থেকে খড় আমদামি করে বিক্রি করা হচ্ছে।এখন বন্যার কারণে সেখানেও খড় পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য পাওয়া গেলেও দাম চড়া। পরিবহন ভাড়া বেশি। ফলে জেলায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রহিম আহমেদ রিপন জানান, সংসারের একমাত্র ভরসা গৃহপালিত পশু খাদ্যের সংকটে মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সহযোগিতার দাবিও জানান তিনি। পাঁচ দফা বন্যায় জেলায়  এক হাজার ১১৬ একর চারণভূমি, ১৯৩ মেট্রিক টন খড়, ৪৯৫ মেট্রিক টন কাঁচা ঘাস নষ্ট হয়েছে। ফলে প্রকট খাদ্য সংকটে পড়েছে জেলার লাখ লাখ গবাদি পশু। জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী জেলায় গরু রয়েছে আট লাখ ৪৭ হাজার ১৪৬টি, মহিষ রয়েছে তিন হাজার ৪৯৫টি, ছাগল রয়েছে  চার লাখ ১২ হাজার ৪৮৫টি, ভেড়া রয়েছে  এক লাখ ছয় হাজার ২৩৩টি এবং ঘোড়া রয়েছে দুই হাজার ৪৯৯টি। গো-খাদ্যের সংকটের কথা স্বীকার করে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার আরটিভি নিউজকে বলেন, বন্যা চলাকালিন সময় ১২ লাখ টাকার পশু খাদ্য এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তিন হাজার ৮৫০ পরিবারকে ৭৫ কেজি করে পশুখাদ্য সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া চলমান সংকটে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে হয়েছে।

Share.