জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে, পুলিশের নবীন সদস্যদের আইজিপি

0

ঢাকা অফিস:  জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে নবীন পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাহিনীর মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নত দেশের উপযোগী করে তোমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তোমাদের কাছ থেকে দেশের জনগণ সর্বোচ্চ সেবা আশা করে। তোমাদেরকে সেবার মানসিকতা নিয়ে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৬৪ তম ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আইজিপি এসব কথা বলেন। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর পর কনস্টেবল নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ‘বেস্ট অব দি বেস্ট’ প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যে কোনো সমস্যায় তোমাদের কাছে ছুটে আসবে। তাদেরকে সেবা দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। কখনো বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কাছে নতি স্বীকার না করে দায়িত্ব পালনের জন্য তোমাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। জাতীয় স্বার্থ, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও সামাজিক স্বার্থকে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। পুলিশপ্রধান বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন, মাদকের অপব্যবহার ও বিস্তার রোধ করা, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও সাফল্য ঈর্ষণীয়। আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এক গৌরবের নাম। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধকারী বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে পুলিশ অনন্য ভূমিকা পালন করছে। করোনা অতিমারীকালে পুলিশের আত্মত্যাগ ও অনবদ্য ভূমিকা আজ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বেনজীর আহমেদ বলেন, সমাজ পরিবর্তনশীল। সে কারণে অপরাধও পরিবর্তনশীল। নতুন অপরাধ ও কৌশল মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করেছে পুলিশ। ফরেনসিক ল্যাব, ডিএনএ পরীক্ষা, সাইবার ক্রাইম, ফিনান্সিয়াল ক্রাইম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারী ও শিশু ডেস্ক, বিট পুলিশিং, জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ সহ আরও অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এছাড়া সাইবার ওয়ার্ল্ডে হয়রানির শিকার নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় চালু করা হয়েছে ‘সাইবার সাপোর্ট পর উইমেন’ নামে বিশেষ সেবা। আইজিপি বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের অন্যায় বরদাশত করা হবে না। যদি কোনো পুলিশ সদস্য অন্যায় করে তার দায়ভার পুলিশ বাহিনী নেবে না। আমরা খারাপ কাজ করে ‘খবরের শিরোনাম’ হতে চাই না। ভালো কাজ দিয়ে ‘খবরের শিরোনাম’ হতে চাই। জনগণের কাছের মানুষ হতে চাই, পাশের মানুষ হতে চাই। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিভিন্নভাবে মূল্যবোধ ও অবক্ষয়ের মুখোমুখি। তাদেরকে মাদক, কিশোর অপরাধ থেকে রক্ষা করতে হবে। তারা যেন জঙ্গিবাদে জড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আইজিপি একটি সুদৃশ্য খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেন প্যারেড কমান্ডার হিসেবে এ বর্ণাঢ্য প্যারেড পরিচালনা করেন। সংশোধিত নিয়োগ বিধি অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত টিআরসিদের ছয় মাস মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণে ৪৫৩ জন সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অধিকার করে শ্রেষ্ঠ টিআরসি নির্বাচিত হয়েছেন টিআরসি বিশাল। আইন বিষয়েও শ্রেষ্ঠ হয়েছেন তিনি। মাঠ বিষয়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন টিআরসি সিয়াম সিদ্দিকী সাগর। আইজিপি বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী টিআরসিদের পদক প্রদান করেন। আইজিপি নবীন পুলিশ সদস্যদের আন-আর্মড কমব্যাট, রাইফেল ম্যানুভ্যারিং ও এক্সসারসাইজ এবং হর্স শো উপভোগ করেন। তিনি তাদের কলা-কৌশল, সক্ষমতা ও দক্ষতার প্রশংসা করেন। এর আগে আইজিপি প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল (অতিরিক্ত আইজি) আবু হাসান মোহম্মদ তারিক আইজিপিকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, একাডেমির ফ্যাকাল্টিগণ, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, টিআরসিগণের অভিভাবকগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে আইজিপি একাডেমির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং একাডেমির পুকুরে মৎস্য অবমুক্ত করেন।

Share.