দিনাজপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত

0

বাংলাদেশ থেকে দিনাজপুর প্রতিনিধি: আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপ-ব্যবহারের ৭টি অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায়, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে কেন অপসারণ করা হবে না সে বিষয়ে পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য মেয়রকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-১ শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্ত করা হয়। দিনাজপুর পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় দিনাজপুরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা যায়, দিনাজপুর পৌরসভার বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলররা মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও পৌরসভার বিধিমালা ভঙ্গ করার অভিযোগ এনে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ সম্প্রতি অভিযোগগুলো তদন্ত করে। এরমধ্যে ৭টি অভিযোগের প্রমাণ পান স্থানীয় সরকার বিভাগের তদন্ত দল। তারা তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগে জমা দেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ইজারাদারের কাছ থেকে সময়মতো টাকা আদায় করতে না পরায় এবং পৌরসভার হাট-বাজার ইজারার টাকা বাকি থাকলেও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ না করে প্রশাসনিক অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দিনাজপুর পৌরসভার জন্য ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু পৌর মেয়র স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা ছাড়াই ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬শ’ ৫ টাকার টেন্ডার করেন। যার কারনে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে পরবর্তী তিন বছরের বরাদ্দ থেকে তা সমন্বয় করা হয়। যার কারণে ওই ৩ বছর দিনাজপুর পৌরসভায় কোনও টেন্ডার করা হয়নি, যা বিধিসম্মত হয়নি মর্মে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে পৌরসভার গরিব, দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭শ’ ৯০ টাকা দুস্থদের কাছে বিতরণ প্রক্রিয়ায় কোনও প্রচলিত বিধি-বিধান প্রতিপালিত হয়নি। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার ১শ’ ৯৩ জন মাস্টার রোলে কর্মচারী নিয়োগেও কোনও বিধিবিধান অনুসরণ করেননি এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিয়োগ দিয়েছেন। ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকের ধার্য করা নিবন্ধন ও নবায়ন ফি’র বিষয়ে দিনাজপুরের প্রাক্তন জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চালকদের প্রশিক্ষণ, ইজিবাইক হলুদ-নীল রঙ দ্বারা চিহ্নিতকরণ, ডাটাবেজ তৈরির সিদ্ধান্ত ছিল- কিন্তু তার কোনও কিছুই করা হয়নি। আদায় করা অর্থ বর্ণিত সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বেতন ভাতা সম্মানী খাতে ব্যয় করা হয়েছে। দিনাজপুর পৗরসভার দাখিল করা ৬১টি বিল বোর্ডের ভাড়া বাবদ বর্তমানে ১১ লাখ ৬২ হাজার ১শ’ ৫০ টাকা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রয়েছে। এসব টাকা আদায়ে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। দিনাজপুর বিদ্যুত বিভাগের কাছে পৌর কর্তৃপক্ষ জমি ভাড়ার টাকা দাবি করে ২৪ কোটি টাকা বিদ্যুত বিল পরিশোধ না করায় অ-ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে দিনাজপুর পৌরসভা বঞ্চিত হয়েছে। ২০১০ সালের ৩০ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৭৯৮ নং স্মারকে পৌরভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা ৩৮ লাখ টাকার ভবন নির্মাণ না করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, মেয়র ও কাউন্সিলরদের সম্মানীভাতা দেয়া হয়েছে। যা আইন ও বিধি সম্মত হয়নি মর্মে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এসব কারণে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এই আদেশ জনস্বার্থে জারি করা হলো এবং অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব বরাবর পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের ৭টি প্রমানিত অভিযোগের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এ বিষয়ে দিনাজপুর পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাকে বরখাস্ত করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে ২০১২ ও ২০১৫ সালে দুদক তদন্ত করে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। ২০২২ সালেও আবার অভিযোগ উত্থাপিত হলো। এবারও আমি অব্যাহতি পাবো। যেখানে আমাকে এক কেজি ৪শ’ গ্রাম চাল দিয়ে জেলে পাঠানো হয়, সেখানে আর কিসের অভিযোগ। বিএনপি করি, এটাই আমার অপরাধ। আমি মনে করি দল করাটা অপরাধ নয়। আমি সারাজীবন বিএনপি করবো।’

 

Share.