দেশে ফেরা শ্রমিকদের তাৎক্ষণিক খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন-আইওএম

0

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে ফেরত আসা ও খুব বেশি ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য তাৎক্ষণিক খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা মেটানো প্রয়োজন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক এজেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) প্রধান জর্জি গিগাউরি এক সতর্কবার্তায় এ কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, মধ্যম থেকে দীর্ঘ মেয়াদে তাদের জন্য প্রয়োজন ঋণ সহায়তা, জীবিকা নির্বাহের জন্য বৈচিত্রময় সহায়তা এবং সমাজের সঙ্গে যাতে টেকসইভাবে মিশে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করা। এক বিবৃতিতে আইওএম বলেছে, দেশে ফেরত আসা শ্রমিকদের ফেরানোর পরিকল্পনা, তাদের গ্রহণ করা এবং সমাজে তাদের একীভূত করার পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করছে আইওএম। বিশে^র বিভিন্ন দেশে নানারকম শ্রমে নিয়োজিত রয়েছেন বেশ কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। ওইসব দেশে করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এ বছর যখনই শিথিল হবে এবং ফ্লাইট চালু হবে, তখন কয়েক হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী দেশে ফিরবেন বলে মনে করা হচ্ছে। জর্জি গিগাউরি বলেছেন, এসব শ্রমিক তাদের আয়ের উৎস হারিয়েছেন। আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন বৈশি^ক মন্দার কারণে।তাই তাদের অনেকেই দেশে ফিরতে চান না। এর কারণ, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠার আগে বিশে^র শ্রম বাজারে নতুন করে তাদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অর্থাৎ সহসাই তারা আর বিদেশে যেতে পারবেন না। করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন দেশ নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কারফিউ, শাটডাউন এবং বিমান চলাচল বন্ধ। ব্র্যাকের সঙ্গ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক এজেন্সি আইওএম। তারা দৃষ্টি দিয়েছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে ফেরত আসা অভিবাসীদের দিকে। বলেছে, ঝুঁকিতে থাকা এসব অভিবাসীকে সহযোগিতা করার জন্য। একই সঙ্গে তাদেরকে অতিরিক্ত তহবিল দিয়ে সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে। এমন সহায়তা দিতে বলা হয়েছে পারস্য সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) ভুক্ত দেশগুলো থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের জন্য। ওইসব দেশে বিপুল থেকে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি অবস্থান করেন। কিন্তু তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ শ্রমিক ছাঁটাই দেয়া হচ্ছে সেখানে। এমন অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে এবং বৈদেশিক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বিদেশে আটকে পড়া এবং ঝুঁকিতে থাকা অভিবাসী, যারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দেশে ফিরতে চান, তাদেরকে সহযোগিতা করছে আইওএম। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্চ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ থেকে এমন ঝুঁকিতে থাকা ৮০৬ জন অভিবাসীকে শনাক্ত করতে পেরেছে তারা। তাদেরকে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তথ্য জানানো হয়েছে। করোনা মহামারিতে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হবে সে বিষয়ে তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চলাচলে বিধিনিষেধ, বেকারত্ব এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ। অভাব এবং ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে কে বেশি ঝুঁকিতে তা চিহ্নিত করে ফেরত আসা প্রবাসীকে তাৎক্ষণিক অর্থ দেয়া হবে, দীর্ঘমেয়াদে সমাজে একীভূত হতে সমর্থন দেয়া হবে, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং মানসিক কাউন্সেলিং দেয়া হবে বলে জানিয়েছে আইওএম তার বিবৃতিতে। এ ছাড়া সাপোর্ট ও কাউন্সেলিং সংক্রান্ত হটলাইন সেট করেছে আইওএম। তা পাওয়া যাবে www.probashihelpline.com এই ওয়েবসাইটে। মার্চ মাস থেকে এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করেছেন ১,১১,৪৭০ জন অভিবাসী। সেটা সামাজিক মাধ্যম অথবা অ্যাপস-ভিত্তিক কলের সাহায্যে। অভিবাসীদের সমর্থন দিতে নানারকম উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত বৈদেশিক কল্যাণ মন্ত্রণালয় এমন দাবি করেছেন এ মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরাস সালেহিন।
বাংলাদেশে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান, রাষ্ট্রদূত রেনজি তেরিঙ্ক বলেছেন, করোনা মহামারিতে অভিবাসীসহ সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়ের নেতিবাচক প্রভাব সমাধানে বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য করতে প্রস্তুত ইইউ। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেছেন, এই সঙ্কটের সময়ে ভয়াবহ দুর্ভোগের শিকার অভিবাসী শ্রমিকরা। দেশে এবং বিদেশে তাদেরকে সহযোগিতা করা আমাদের অগ্রাধিকারে থাকা উচিত।

Share.